সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজবের জেরে মুরগী বিক্রিতে ভাঁটা, দুশ্চিন্তায় ব্যবসায়ীরা
চীনের করোনা ভাইরাসের সরাসরি কোনো প্রভাব এই রাজ্যের বুকে না পড়লেও কেবলমাত্র সোস্যাল মিডিয়ার গুজবের জেরে বিশেষত মুরগীর মাংস বিক্রি নিয়ে রীতিমত দুশ্চিন্তায় পড়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার পোলট্রি মুরগী ব্যবসায়ীরা। গত কয়েকদিন ধরে সোস্যাল মিডিয়ায় মুরগীর মাংসেও করোনা ভাইরাস এই ধরণের গুজব ছড়ানোয় মুরগীর মাংসের বিক্রি হু হু করে কমতে শুরু করেছে।
রবিবার যেখানে মুরগীর মাংসের চাহিদা থাকে সাধারণত অন্যান্য দিনের থেকে অনেক বেশি, সেখানে খোদ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এদিন মুরগীর মাংসের বিক্রি হয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ। করোনা বা মরফিন ভাইরাস নিয়ে গুজবের জেরেই এই ঘটনা বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। বর্ধমানের পাইকারী মুরগী ব্যবসায়ী অরিন্দম কোনার জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন মুরগী বিক্রি প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই দামও গড়ে ৫ থেকে ৭ টাকা কমেছে। তিনি জানিয়েছেন, এই গুজবের জেরকে মোকাবিলা করার জন্য তাঁরাও সাংগঠনিকভাবে আবেদন জানাচ্ছেন।
তিনি জানিয়েছেন, প্রতিবছরই এই শীত চলে যাওয়া এবং গরম পড়ার মাঝেই সাধারণত পাখির কিছু রোগভোগ হয় আবহাওয়াজনিত কারণে। এশিয়ান ফ্লু বা বার্ড ফ্লু তার মধ্যে পরিচিত নাম। কিন্তু এখনও এই রাজ্যের কোথাও সেই ধরণের একটি ঘটনাও ঘটেনি। ফলে গোটা বিষয়টিই কার্যত গুজব ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি সরকারী তরফেও তাঁদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে এই ধরণের করোনা ভাইরাসের কোনো প্রভাব এই রাজ্যে নেই।
এরই পাশাপাশি অরিন্দমবাবু জানিয়েছেন, মুরগির দাম কম থাকলে কোনো কোনো সময় ওড়িষ্যা এবং অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে কিছু ব্যবসায়ী মুরগী এই রাজ্যে নিয়ে আসেন। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য এই দুটি রাজ্যের সীমান্তই সিল করে দেওয়া হয়েছে যাতে সেখান থেকে কোনো মুরগী বা ডিম আসতে না পারে। এরই পাশাপাশি অরিন্দমবাবু জানিয়েছেন, প্রতিটি পোল্ট্রি ফার্মে রীতিমত সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। স্প্রে সহ সমস্ত রকম প্রতিষেধক ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুরগীর মাংস নিয়ে কোনোরকম আতংকিত হবার কারণ নেই। গোটা বিষয়টিই কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।
একইকথা বলেছেন রাজ্য পোলট্রি ফেডারেশনের বর্ধমান জেলা সভাপতি নিমাই কুণ্ডুও। তিনিও জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টিই গুজব। এর কোনো সত্যতা নেই। এমনকি সরকারীভাবেও সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তাঁরা গোটা জেলা জুড়েই সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, এই গুজবের জেরে মুরগীর বিক্রি প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। বর্ধমানের খুচরো মুরগী ব্যবসায়ী সিদ্ধার্থ মণ্ডল জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস গুজবের জেরে মুরগীর দাম কমছে। কারণ বিক্রি কমায় এখন তাঁদের মুরগীকে পালন করতে হচ্ছে। ফলে মুরগীর খাবারের খরচ দিয়ে তাদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই অনেকে কম লাভেই বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।