ব্যাট করছেন বিরাট, গ্যালারিতে ‘দাদা দাদা’ চিৎকার, সৌরভকে জিতিয়ে দিল ইডেন
ঠিক ১৪ বছরের ব্যবধান। এক অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোকের ঔদ্ধত্যের জবাব দিলেন এক বাঙালি। ‘মিডল ফিঙ্গার’ দেখানোর জবাব সেলফিতে। কী অদ্ভুত সমাপতন। সেটা হল ইডেন গার্ডেন্সেই। জিতলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। দাদাকে জিতিয়ে দিল ইডেন গার্ডেন্সের গ্যালারি।
তখন সৌরভ বাদ পড়েছেন ভারতীয় দল থেকে। বলা ভাল জবরদস্তি বাদ দেওয়া হয়েছে মহারাজকে। তৎকালীন কোচ গ্রেগ চ্যাপেলের কোপেই যে সৌরভকে টিম ম্যানেজমেন্ট ছেঁটে দিয়েছিল, সেটা ছিল ‘ওপেন সিক্রেট।’ তখন ফুঁসছে বাঙালি। ফুটছে কলকাতা। যেন জাত্যাভিমানে সপাটে আঘাত।
২০০৫ সালের ২৭ নভেম্বর। সন্ধেবেলা। পরের দিন ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা একদিনের ম্যাচ ইডেনে। ভারতীয় দল অনুশীলন শেষ করে টিম বাসে উঠছে। উঠলেন চ্যাপেলও। বাইরে তখন সমর্থকদের ‘দাদা দাদা’ চিৎকারে ইডেনের সামনে যেন বিদ্রোহের মেজাজ। অস্ট্রেলীয় ভদ্রলোক বাসে উঠে সমর্থকদের দিকে মধ্যমা দেখিয়েছিলেন। তারপর স্বগর্বে বলেছিলেন, “যত্তসব উদ্ভট সমর্থক!”
কাট টু ২২ নভেম্বর ২০১৯। দুপুর বেলার ইডেনের গ্যালারিতে দাঁড়ালেন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সাদা শার্ট, গাঢ় নীল ব্লেজার, চোখে রিমলেস চশমা, শক্ত চোয়াল আর পিছনে উত্তাল গ্যালারি। ঐতিহাসিক দিন-রাতের টেস্ট শুরুর আগে সেলফি তুলে টুইট করলেন প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক। অনেকে বলছেন, ১৪ বছর আগে যে ইডেনে তাঁর সমর্থকদের অপমানিত হতে হয়েছিল, সেই ইডেনে দাঁড়িয়েই সেই ভদ্রলোককে জবাব দিলেন সৌরভ। সেদিনের বাদ পড়া ছেলেটা আজ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সর্বোচ্চ পদে।
সৌরভকে জিতিয়ে দিল ইডেন। সকাল থেকে খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত পরিপূর্ণ রইল গ্যালারি। শেষ কবে টেস্ট ক্রিকেটে এমন উন্মাদনা দেখেছে কলকাতা? অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভিভিএস লক্ষ্মণের দ্বিশত রান আর হরভজন সিং-এর হ্যাটট্রিকের টেস্ট ম্যাচে এমনই গ্যালারি ভরিয়েছিল ইডেন। তখন সৌরভ ক্যাপ্টেন। আর এখন প্রশাসক।
চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর। হারিয়ে যাওয়া টেস্টের আবেগ ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ। করে দেখালেন সৌরভ। মাঠের বাইরে গোলাপি রঙের ছটা ছড়াতে শুরু করেছিল বৃহস্পতিবার সন্ধে থেকেই। দ্য 42, হাওড়া ব্রিজ, শহিদ মিনার—গোলাপি রঙে রেঙে গিয়েছিল কাল থেকেই। প্রথম চার দিনের টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছিল চার দিন আগেই। তারপর আজকের মাহেন্দ্রক্ষণ। শেখ হাসিনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শচীন তেন্ডুলকর, কপিল দেব, রাহুল দ্রাবিড়, সানিয়া মির্জাদের উপস্থিতি, খেলার শেষে রুনা লায়লার গান—সব মিলিয়ে টেস্ট ক্রিকেটকে মনোরঞ্জনের টানটান প্যাকেজ হিসেবে উপস্থাপন করলেন দাদা
দুপুর বেলার বিরতিতে মাঠের মাঝে আড্ডা দিতে দিতে হরভজন সিং বলছিলেন, “দাদা সারা জীবন আমার ক্যাপ্টেন থাকবেন।” ইডেনের স্মৃতিকথা শোনাচ্ছিলেন ভাজ্জি। আর সন্ধেবেলা যখন ৪০ রানের মাথায় বিরাট কোহলি ব্যাট করছেন, তখন সৌরভ একবার প্যাভেলিয়নে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। ‘বিরাট বিরাট’ চিৎকারের বদলে ইডেন শুনল সেই গগনভেদী ‘দাদা দাদা’ চিৎকার।
জিওফ্রে বয়কট ধারাভাষ্যে থাকলে হয়তো বলতেন, ‘দিস ইজ দ্য স্পিরিট অফ প্রিন্স অফ ক্যালকাটা!