‘‘আমার দেশ মহিলা ও শিশুদের জন্য নিরাপদ নয় “ হায়দ্রাবাদের গণধর্ষণ কান্ড নিয়ে রাজ্যসভায় বলতে গিয়ে এক মহিলা সাংসদের আর্তনাদ
হায়দ্রাবাদের অদূরে সামসাবাদে তরুণী পশু চিকিৎসককে গণধর্ষণ করে পুড়িয়ে মারার ঘটনা কেন্দ্র করে দেশজুড়ে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সাধারণ মানুষ সরব হয়েছে । একইভাবে সোমবার সংসদের দুই কক্ষ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে পড়ে । শাসক-বিরোধী সব দলই ঘটনার নিন্দায় সরব হয় ।
এ দিন লোকসভা এবং রাজ্যসভায় সরকার ও বিরোধী সব পক্ষের সাংসদরাই এই ধর্ষণকাণ্ডের তীব্র নিন্দায় সরব হন। প্রয়োজনে আরও কঠোর আইন আনতে প্রস্তুত সরকার পক্ষও। লোকসভার পক্ষ থেকে স্পিকার ওম বিড়লা বলেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা রুখতে সংসদ আলোচনায় প্রস্তুত।’’
সোমবার রাজ্যসভা এবং লোকসভা উভয় কক্ষেই এই গণধর্ষণ ও খুন কাণ্ড নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন বিরোধীরা। সেই আলোচনাতেই রাজ্যসভায় সমাজবাদী পার্টি সাংসদ জয়া বচ্চন বলেন, ‘‘এই ধরনের লোকদের জনসমক্ষে নিয়ে আসা উচিত এবং পিটিয়ে মারা উচিত।’’
রাজ্যসভায় বক্তব্যের সময় কিছুটা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন জয়া। ধরা গলায় বলতে থাকেন, আমি জানি না, কত বার এই ধরনের অপরাধের জন্য বলতে উঠেছি। আমি মনে করি এ বার সময় এসেছে। নির্ভয়া হোক বা কাঠুয়া কিংবা তেলঙ্গানা—মানুষ চায়, সরকার এর সঠিক ও নির্দিষ্ট জবাব দিক। আমি মনে করি, এটাই আদর্শ সময়।’’ পরের মুহূর্তেই এক গুচ্ছ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে জয়া বলেন, ‘‘সরকার কী করেছে? কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে? নির্যাতিতারা কি বিচার পেয়েছেন? কারও নাম নিতে চাই না। কিন্তু এর জন্য কি নিরাপত্তা দায়ী নয়? আমার মনে হয়, এক দিন আগেও তেলঙ্গানায় একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। তার পরেও কেন আটকানো গেল না?’’
কিন্তু শুধু আইনশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা— গড়পড়তা এ সব বিষয়কে দুষেই ক্ষান্ত হননি জয়া। বরং কার জন্য, কেন এ সব ঘটনা আটকানো যাচ্ছে না, এর জন্য দায়ী কে বা কারা, তাঁদের নির্দিষ্ট করা এবং নাম প্রকাশ করা এবং নিন্দা করার দাবিও তুলেছেন সাংসদ জয়া।
জয়ার পাশাপাশি এ দিন এডিএমকের রাজ্যসভার মহিলা সাংসদ বিজিলা সত্যনাথ রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘আমার দেশ মহিলা ও শিশুদের জন্য নিরাপদ নয়। দোষীদের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।’’ কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদের যুক্তি, শুধু সংসদ বা বিধানসভায় নয়, সর্বত্র এ নিয়ে সচেতনতার প্রচার হওয়া দরকার।
রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুও ঘটনার নিন্দা করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যেটা প্রয়োজন সেটা শুধু আইন প্রণয়ন নয়। দরকার ‘রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা’ এবং মানসিকতার পরিবর্তন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘সেটা করুন এবং সমাজের এই অভিশাপকে দূর করুন।’’
একই ভাবে লোকসভাতেও এ দিন ধর্ষণ–খুন কাণ্ড নিয়ে সরব হন বিরোধী সাংসদরা। আইনশৃঙ্খলা ও মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে সরব হন সব দলের সাংসদ। এনসিপি সাংসদ সুপ্রিয়া সুলে বলেন, ‘‘লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে। এই ধরনের ঘটনা কোনও ভাবেই বরদাস্ত করা উচিত নয়।’’ অন্য দিকে সরকার পক্ষের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহও ঘটনার নিন্দা করে বলেন, ‘‘ধর্ষণ আইন আরও কঠোর করতে সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত। আরও কঠোর আইনের জন্য যদি সহমত হয়, সরকার সেটা প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করতে প্রস্তুত।’’ তবে এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার স্পিকারের উপরেই ছেড়েছেন।
পরে স্পিকার আলোচনার প্রস্তাবে সায় দেন। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের নৃশংস ঘটনা (তেলঙ্গানায় গণধর্ষণ ও খুন) যে ঘটেছে, তার জন্য সংসদের পক্ষ থেকে আমি দুঃখপ্রকাশ ও তীব্র নিন্দা করছি। ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনার পুনারবৃত্তি আটকাতে সংসদ ঐক্যবদ্ধ। সরকার পক্ষও আলোচনায় সায় দিয়েছে।’’