অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগনমোহন রেড্ডির বাড়ির জানলা-দরজা তৈরির জন্য ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করল সরকার । শুধু তাই নয়, নিজের বাড়িতে চন্দ্রবাবুর কায়দাতেই বিপুল খরচে তৈরি করেছেন প্রজা দরবার। বাড়ির কাছে রাস্তা, হেলিপ্যাড তৈরি, বাড়ি লাগোয়া জমি অধিগ্রহণেও খরচ হয়েছে কোটি কোটি টাকা। গোটা বিষয় সামনে আসতেই অনেকেই বলছেন, এ তো চন্দ্রবাবুকেও লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন জগন। তীব্র আক্রমণ করেছেন চন্দ্রবাবুও।
এ বছরের মে মাসে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে জগনমোহন রেড্ডির ওয়াইএসআর কংগ্রেস। মুখ্যমন্ত্রী হন জগন নিজে। ভরাডুবি হয় চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টির। চন্দ্রবাবু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আট কোটি টাকা ব্যয়ে একটি দরবার হল তৈরি করিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে পরেই ওই দরবার হল বেআইনি ঘোষণা করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল জগনের সরকার। তা নিয়ে বিতর্ক হলেও সিদ্ধান্ত অটল ছিলেন জগন।
টুইটারে চন্দ্রবাবু প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ওয়াই এসআর কংগ্রেসের জগন সরকার তাঁর বাড়ির দরজা–জানালার জন্য ৭৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে! রাজকোষের টাকা অপব্যবহারের চূড়ান্ত উদাহরণ এটা। এমন একটা সময়ে তা সামনে এল, যেখানে অন্ধ্রপ্রদেশ গত পাঁচ মাস ধরে চূড়ান্ত অর্থনৈতিক অব্যবস্থার খেসারত দিচ্ছে। সত্যিই দুশ্চিন্তার বিষয়।’ শুধু চন্দ্রবাবুই নয়, অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, জনগণের করের টাকায় এত বিলাসব্যসনের সত্যিই কতটা প্রয়োজন?
কিন্তু এটাই একমাত্র নয়। অন্ধ্রের অর্থ দফতর সূত্রে উঠে এসেছে, গুন্টুরে নিজের বাড়ি এবং সংলগ্ন এলাকার জন্য বিপুল অর্থব্যয় করেছেন জগন। ক্ষমতায় আসার পরে পরেই গুন্টুরের তাড়েপল্লিতে নিজের বাড়ির এলাকায় রাস্তা তৈরিতে ব্যয় হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। বাড়িতে বসিয়েছেন হেলিপ্যাড। খরচ এক কোটি ৮৯ লক্ষ। তিন কোটি ২৫ লক্ষে অধিগ্রহণ করেছেন বাড়ি লাগোয়া জমি। বাড়ি সংস্কার ও ইলেকট্রিকের কাজে রাজকোষ থেকে মেটানো হয়েছে তিন কোটি ৬০ লক্ষ টাকা।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন চন্দ্রবাবুর বিরুদ্ধেও অবশ্য অবাঞ্ছিত খরচ বা অতিরিক্ত খরচের অভিযোগ কম ওঠেনি। আট কোটি টাকায় কনফারেন্স হল তৈরি ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, অন্ধ্রের বিশেষ মর্যাদার দাবি আদায়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে এক দিনেই খরচ করেছিলেন ১০ কোটি টাকা। এ ছাড়া রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ক্যাম্প অফিস চালানোর জন্য ৮০ কোটি টাকা খরচের অভিযোগও রয়েছে টিডিপি প্রধানের বিরুদ্ধে।
কিন্তু জগনমোহন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই ঘোষণা করেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি মাত্র এক টাকা বেতন নেবেন। চন্দ্রবাবুর ছেলে নারা লোকেশ এই বিষয়টিই তুলে ধরে বলেছেন পুরোটাই ভণিতা। টুইটারে তাঁর কটাক্ষ, ‘উনি বলেন, মাত্র এক টাকা বেতন নেন।’ জগনের এমন বিলাসবহুল বাসভবন তৈরির খরচ দেখে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘তবে কি পুরোটাই দেখনদারি, দ্বিচারিতা।’