করোনা ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করেছিলেন যে চীনা ডাক্তার সর্বপ্রথম তাঁর মৃত্যু বিতর্কের জন্ম দিল

Biswas Riya

সর্বপ্রথম নভেল করোনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেছিলেন তিনি। তা নিয়ে সতর্কও করতে গিয়েছিলেন কাছের লোকজনকে। কিন্তু তাতে সরকারের বিষনজরে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করবেন না বলে মুচলেকা দিতে হয়েছিল। পেশায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ সেই চিকিৎসকের মৃত্যুতেই এ বার ফুঁসছে গোটা চিন। করোনাভাইরাসের জেরে দেশ জুড়ে যখন মৃত্যুমিছিল অব্যাহত, তখন বাক স্বাধীনতার দাবিতে সরব হয়েছে সে দেশের নাগরিকদের একটি অংশ।

নভেল করোনার আঁতুড়ঘর যে উহান,  সেখানকার সেন্ট্রাল হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন ৩৪ বছরের লি ওয়েনলিয়াং। রোগীদের শুশ্রুষায় নিযুক্ত থাকাকালীন সেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তিনি। শুক্রবার ভোরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে। আর তাতেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। বিক্ষুব্ধদের দাবি, সময় থাকতেই নভেল করোনা নিয়ে সতর্ক করেছিলেন লি। সেই সময় সরকার তাঁর মুখ বন্ধ না করলে, আজ পরিস্থিতি হয়তো এত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠত না।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশ জুড়ে মহামারী দেখা দেওয়ার ঢের আগেই নভেল করোনার ভয়াবহতা আঁচ করতে পেরেছিলেন লি। মেসেজিং অ্যাপ উইচ্যাট এবং মাইক্রোব্লগিং সাইট উইবো-র মাধ্যমে রহস্যজনক এই ভাইরাস সম্পর্কে নিজের কাছের লোকজন এবং সহকর্মীদের সতর্কও করেছিলেন তিনি। সেই সময় সাত জন রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখতে পেয়েছিলেন লি। যে কোনও মুহূর্তে তা ২০০৩ সালের সার্স ভাইরাসের মতো মহামারীর আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তিনি। নিজের সহকর্মীদের তাই মুখে মাস্ক ও ঢাকা পোশাক পরতে পরামর্শ দিয়েছিলেন।

 

কিন্তু সরকারি নজরদারিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর এই কথোপকথন ধরা পড়ে যায়। যার পর ৩ জানুয়ারি উহানের পাবলিক সেফটি ব্যুরোতে তাঁর ডাক পড়ে। সেখানে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়। জোর করে তাঁকে দিয়ে একটি মুচলেকাও লিখিয়ে নেওয়া হয়, যাতে বলা হয়, মিথ্যা গুজব রটিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা নষ্ট করেছেন তিনি। লি এবং আরও সাত জনের বিরুদ্ধে সেই নিয়ে তদন্তও শুরু হয়।

পরে করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করলে স্থানীয় প্রশাসনের তরফে যদিও তাঁর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। তবে তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। গত ১০ জানুয়ারি কাশি শুরু হয় লি-র। সেই সঙ্গে ধুম জ্বর। তার দু’দিনের মধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় তাঁকে। ৩০ জানুয়ারি জানা যায়, তাঁর শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে। এ দিন সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।

 লি-র মৃত্যুর খবর সামনে আসার পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে সে দেশের নাগরিকদের একটি অংশ।  সরকারের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বহু মানুষ। তাতে উহান সরকারকে লি-র কাছে ক্ষমা চাইতে হবে বলে দাবি তুলেছেন অনেকে। সত্যিটা চাপা দিতে জোর করে লি-কে মুচলেকা দিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। বাক স্বাধীনতা নিয়ে সরব হয়েছেন অনেকেই। #উইওয়ান্টফ্রিডমঅবস্পিচ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নাগরিকদের গতিবিধির উপর বরাবরই নজর রাখে চিন সরকার। লি-কে নিয়ে প্রতিবাদের যে ঝড় উঠেছে, তা দমন করতেও সক্রিয় হয়েছে তারা। লি-কে নিয়ে লেখা কয়েক হাজার মন্তব্য ইতিমধ্যেই মুছে দেওয়া হয়েছে। মুছে দেওয়া হয়েছে যাবতীয় হ্যাশট্যাগও। সরাসরি লি-র নাম উল্লেখ নেই এমন কিছু টুইটই এখন উইবো-তে দেখা যাচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

অন্য দিকে, চিনা প্রশাসনের তরফে সব রকম আশ্বাস দেওযা হলেও, করোনাভাইরাসের জেরে ইতিমধ্যেই সেখানে মৃত্যুসংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। কমপক্ষে ৩১ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। চিন ছাড়িয়ে ভারত এবং জাপানের মতো দেশেও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছ, যার জেরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র তরফে করোনার জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিকে 'আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সঙ্কট' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

 

Find Out More:

Related Articles: