বিচ্ছেদের পরেও সম্পর্ক নিবিড় গুলজারের সাথে রাখির

Biswas Riya

বরাবরই তিনি স্বাধীনচেতা। নিজের জীবনেও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি কোনও দিন। বাঁচতে চেয়েছেন নিজের শর্তে। কিন্তু বিচ্ছেদের সাড়ে চার দশক পরেও স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ নিবিড় রাখি গুলজারের।

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট নদিয়ার রানাঘাটে জন্ম রাখির। পূর্ববঙ্গে তাঁর বাবার জুতোর ব্যবসা ছিল। দেশভাগের পরে সব ফেলে চলে আসতে হয় এপার বাংলায়। কিছুটা শ্রীহীন হয়ে পড়ে অবস্থাপন্ন সংসার।

তার মাঝেই বড় হতে থাকেন ডানপিটে রাখি। ছোট থেকেই ভালবাসতেন সিনেমা দেখতে। এমন সময় বাড়ির কাছেই সিনেমার শুটিং শুরু হল। অরবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় সে ছবির নাম ছিল ‘আহ্বান’। শুটিং দলের সঙ্গে দিব্যি ভাব জমে গেল কিশোরী রাখির।

বাড়ি থেকে কলকাতা চলে এলেন রাখি, ছবির নায়িকা সন্ধ্যা রায়ের সঙ্গে। তাঁর প্রাথমিক গ্রুমিংয়ের পিছনে সন্ধ্যা রায়ের ভূমিকা ছিল অনেকটাই।

১৯৬৩ সালে মাত্র ষোলো বছর বয়সে রাখির বিয়ে হয়ে গেল। রাখি মজুমদারের নতুন পরিচয় হল রাখি বিশ্বাস। কিন্তু মাত্র দু’বছরেই ভেঙে গেল সংসার। পরিচালক, সাংবাদিক অজয় বিশ্বাসকে ছেড়ে একা থাকতে শুরু করলেন রাখি।

ছবিতে প্রথম সুযোগ ১৯৬৭ সালে। বাংলা ছবি ‘বধূবরণ’-এ নজর কাড়লেন নবাগতা রাখি। এরপর সুযোগ আরবসাগরের তির থেকে। প্রথম হিন্দি ছবি ‘জীবন মৃত্যু’-তেই তিনি তখনকার সুপারস্টার ধর্মেন্দ্রর নায়িকা।

নজরকাড়া ব্যক্তিত্ব আর অভিনয়ের গুণে অল্প সময়ের মধ্যেই রাখি চলে এলেন ব্যস্ত নায়িকাদের তালিকায়। ‘শর্মিলী’,‘পারস’, ‘শাহজাদে’, ‘হিরা পান্না’, ‘হামারে তুমহারে’, ‘আঁচল’, ‘বনারসি বাবু’— তালিকায় যোগ হতে থাকে একের পর এক সফল ছবি |

নায়কদের মধ্যে সবথেকে বেশি জুটি বেঁধেছেন শশী কপূরের সঙ্গে। মোট ১০টি মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিতে অভিনয় করেছেন দুজনে। ‘শর্মিলী’ ছাড়াও আছে ‘জানোয়ার অউর ইনসান’, ‘কভি কভি’, ‘দুসরা আদমি’, ‘তৃষ্ণা’, ‘বসেরা’ এবং ‘জমিন আসমান’-এর মতো ছবি। নায়িকা হিসেবে তাঁর শেষ ছবিও শশী কপূরের বিপরীতেই, ১৯৮৫ সালে ‘পিঘলতা আসমান’।

আবার এই বলিষ্ঠ অভিনেত্রীকে পেতে চলেছেন দর্শক। আসন্ন কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে আন্তর্জাতিক মুক্তি হবে গৌতম হালদারের পরিচালনায় ‘নির্বাণ’-এর।

ছবিতে অভিনয় শুরুর সময়ে রাখি কোনও পদবি ব্যবহার করতেন না। কিন্তু সেই রাখি-ই নামের পাশে লিখলেন ‘গুলজার’। ১৯৭৩ সালে পরিচালক তথা কবি গুলজারকে বিয়ে করার পরে।

জন্ম পঞ্জাবি পরিবারে হলেও মননে নিজেকে বাঙালি ভাবতেই ভালবাসেন কবি গুলজার। কিন্তু বাঙালিকন্যার সঙ্গে তাঁর দাম্পত্য স্থায়ী হল না। ১৯৭৪ সালে, তাঁদের মেয়ে মেঘনার যখন মাত্র এক বছর বয়স, আলাদা হয়ে গেলেন রাখি ও গুলজার।

তবে তাঁরা কোনওদিন খাতায়কলমে ডিভোর্স করেননি। মেয়ে যাতে কোনও দিন বাবা-মায়ের সাহচর্য থেকে বঞ্চিত না হয়, সে দিকেও খেয়াল রেখেছেন দু’জনেই। এক সাক্ষাৎকারে গুলজার জানিয়েছিলেন, তিনি এখনও রাখিকে শাড়ি উপহার দেন, যেমন দিতেন বিয়ের আগে প্রেমপর্বে। রাখির জন্য শাড়ি কিনতে গিয়েই নাকি তিনি চিনেছিলেন বিভিন্ন রকম তাঁতের শাড়ি। তিনি এখনও ভালবাসেন রাখির হাতের মাছের ঝোল।

বিচ্ছেদের কারণ নিয়ে দু’জনে মুখ খোলেননি। তবে শোন যায়, গুলজারের মানসিকতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি রাখি। তিনি বিয়ের আগেই জানতেন গুলজারের রক্ষণশীল মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু ভেবেছিলেন হয়তো বিয়ের পর পরিবর্তন আসবে।

গুলজার ও রাখির একমাত্র মেয়ে মেঘনা-ও একজন সফল পরিচালক। তিনি বড় হয়েছেন বাঙালি এবং পঞ্জাবি পরিবারের মিশ্র ঘরানায়। বাংলা ভাষাতেও স্বচ্ছন্দ ‘হু তু তু’, ‘ফিলহাল’ ও ‘রাজি’-র পরিচালক।

 


Find Out More:

Related Articles: