অ্যাসিডে আক্রান্ত কঙ্গনার দিদি
অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগারওাল এর যন্ত্রণার কথা এতদিনে সবাই জেনে গিয়েছেন। কিন্তু এই লক্ষ্মী আগরওাল এর মত আরও শত শত অ্যাসিড আক্রান্তের কথা সবাই জানেননা। এঁদের মধ্যে খুব পরিচিত একটি মুখ হচ্ছে কঙ্গনা রানাউতের দিদি রঙ্গোলী চান্দেল।
রঙ্গোলির কাহিনি লক্ষ্মী আগরওয়ালের থেকে কোনও অংশে কম নয়। আর্থিক সম্বলের জোরে টানা পাঁচ বছর ধরে ৫৪টি অস্ত্রোপচার করিয়েছেন। কিন্তু নিজেকে আগের জায়গায় নিয়ে যেতে পারেননি তিনি।
পুরোপুরি বাদ চলে গিয়েছে বাঁ কানটা। বাঁ দিকের চোখেও ৯০ শতাংশ দৃষ্টিও হারিয়েছেন তিনি। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় বাঁ দিকের স্তনও। এ সব ছিল শারীরিক যন্ত্রণা। কিন্তু তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি ছিল মানসিক যন্ত্রণা।
মাসের পর মাস আয়নায় নিজের দিকে তাকাতে পারতেন না তিনি। বাবা-মাও তাঁর মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন না। আত্মীয়েরাও তাঁকে দেখে ভয় পেতে শুরু করেন।
হিমাচলপ্রদেশের ভামলা গ্রামে ১৯৮৩ সালের ২ ডিসেম্বর জন্ম নেন রঙ্গোলি। কঙ্গনা তাঁর বোন। তাঁদের একটা ভাইও রয়েছে। তিনজনেই একসঙ্গে বড় হন। পরে কলেজে পড়াশোনার জন্য দেহরাদুনে থাকতে শুরু করেন রঙ্গোলি।
তাঁর জীবনে দুর্ঘটনাটা সে সময়েই ঘটে গিয়েছিল। তাঁর কলেজেরই একটি ছেলে, বলতে হয় তাঁরই এক বন্ধু প্রেম প্রস্তাব দেন তাঁকে। রঙ্গোলি তাতে রাজি ছিলেন না। প্রথম দিকে ছেলেটিকে তিনি উপেক্ষাই করতেন তিনি।
সে সময় বাড়ি থেকেও রঙ্গোলির জন্য বিয়ের দেখাশোনা চলছিল। তাঁর জন্য ভারতীয় বিমান বাহিনীর এক অফিসারকে পাত্র হিসেবে ঠিক করে ফেলেন পরিবার।
এটা জানতে পারার পর থেকে কলেজে টেকা দায় হয়ে পড়ে রঙ্গোলির। সেই বন্ধু অত্যধিক উত্যক্ত করতে শুরু করেন তাঁকে। তাঁকে বিয়ের জন্য জোরাজুরি করতে শুরু করেন।
কিন্তু লক্ষ্মী আগরওয়ালের মতো রঙ্গোলিও সেই চরম ভুলটা করে ফেলেছিলেন তখন। নিজের পরিবারকে বা পুলিশকে ওই ছেলেটির সম্পর্কে কিছু জানাননি। আর সেই সুযোগটাই নেয় সে।
সেই দিনটা ছিল ৫ অক্টোবর ২০০৬। দেহরাদুনে কলেজের আরও চারটি মেয়ের সঙ্গে একই ঘরে ভাড়া থাকতেন তিনি। ওই দিন একটা অচেনা ছেলে তাঁদের দরজায় কড়া নাড়ে। প্রথমে রঙ্গোলির এক বান্ধবী দরজা খুলেছিলেন।
ছেলেটি তাঁকে জানিয়েছিল, রঙ্গোলির জন্য একটা কুরিয়ার আছে, তাই তাঁকে একটু ডেকে দিতে হবে। রঙ্গোলি যেই মুহূর্তে দরজায় আসেন, মুহূর্তে একটা বড় মগ ভর্তি এক লিটার অ্যাসিড রঙ্গোলির মুখে ছিটিয়ে দেয় সে।
অ্যাসিডের কিছুটা ছিটকে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বান্ধবীর গায়েও লাগে। তবে তাঁর অতটা ক্ষতি হয়নি। তবে রঙ্গোলি ততক্ষণে যন্ত্রণায় মেঝে লুটিয়ে পড়েছেন। তাঁর মাংসগুলো গলে গলে মেঝেতে পড়ছিল।
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মুখের বাঁ দিকটা। যতক্ষণে রঙ্গোলিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি বাঁ চোখের ৯০ শতাংশ দৃষ্টি হারিয়েছিলেন। বাঁ কানের মাংস গলে কুণ্ডলী পাকিয়ে গিয়েছিল। অ্যাসিডে পুড়ে বাঁ স্তনের মাংসও গলে পড়ছিল।
এই যন্ত্রণাই শুধু তাঁর প্রাপ্তি ছিল না। তাঁর জন্য অপেক্ষায় ছিল আরও অনেক যন্ত্রণা। ভারতীয় বিমান বাহিনীর যে অফিসারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে ঠিক হয়েছিল। এই ঘটনার পরই সেই বিয়ে ভেঙে দেন তিনি। মাসের পর মাস ওই বিকৃত মুখ লুকিয়ে রাখতেন। নিজেকে দেখে নিজেই শিউরে উঠতেন।
সে সময়ে তিনি পাশে পেয়েছিলেন বোন কঙ্গনাকে। এই পুরো জার্নিটা দিদিকে লড়ার সাহস জুগিয়েছেন কঙ্গনা। ৫৪ বার অস্ত্রোপচার হয়েছে তাঁর মুখে। শরীরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মাংস নিয়ে মুখে প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু অ্যাসিডে পোড়া দাগ পুরোপুরি মুছে দেওয়া যায়নি।
তাঁর এই পোড়া মুখটাকে কেউ যে কখনও ভালবাসতে পারবে, স্বপ্নেও ভাবেননি তিনি। ২০১১ সালে তাঁরই ছেলেবেলার বন্ধু অজয় চান্ডেলের সঙ্গে বিয়ে হয় তাঁর। তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে। সম্প্রতি রঙ্গোলি টুইটারে ওই আক্রমণের ঘটনায় দোষীর নাম প্রকাশ করেন। অবিনাম শর্মা। ২০১৭ সালে দেহরাদুন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।