চিড় ধরছে কি নিজের সংসারে ?
এনআরএস এ চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনায় ভিন্ন সুরের তালিকাটা ক্রমশ বেড়েই চলেছে । প্রথমেই আমারা দেখেছিলাম মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এর কন্যা সাব্বা হাকিম এর বক্তব্য, যিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। তারপর সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার এর দুই পুত্র বিশ্বনাথ ঘোষদস্তিদার ও বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার, উভয়ই পেশায় চিকিৎসক। আন্দোলনকারীদের মিছিলেও দেখা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ভাই কার্ত্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় এর চিকিৎসক পুত্র আবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তৃনমূল এর দুই গুরুত্বপূর্ণ সাংসদ আভিনেতা দেব ও মিমি চক্রবর্তীকেও সোশাল মিডিয়ায় সরব হতে দেখা গিয়েছে।
আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পাশে থাকার বার্তা তৃনমূলের সংসার থেকেই উঠে আসায় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে যে, তাহলে কি “চিড় ধরছে তৃনমূলের নিজের সংসারেই” ? বিরোধিপক্ষ মনে করছেন রাজনৈতিক কারনবশত শাসকগোষ্ঠীর নেতানেত্রীরা যা সরাসরি বলতে পারছেন না, সেইসব মতামতের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে তাঁদের সন্তানদের বক্তব্যের মাধ্যমে।
অপরদিকে শাসকদলের সাথে জড়িত মা বাবাদের বক্তব্য পেশাদার চিকিৎসক হিসাবে তাঁদের সন্তানদের নিজস্ব মত প্রকাশ এর স্বাধীনতা আছে। এসব কোনভাবেই রাজনীতির সাথে জড়িত নয়। এনআরএস এর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার কোলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সোশাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট করেন যে, “ যারা ডাক্তারবাবুদের পেটান, তারা গণশত্রু। আদালতের কাছে দাবি থাকবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক । যাতে ভবিষ্যতে ডাক্তারবাবুদের গায়ে কেও হাত দেওয়ার সাহস না পায় ”।
মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের দ্রুত কাজে যোগ না দিলে হোস্টেল খালি করে দেওয়ার আইনানুগ ব্যাবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলেন, তার কিছুক্ষণ পরেই কেপিসি মেডিকেল কলেজের প্রাক্তনী সাব্বা পুনরায় সতীর্থ চিকিৎসকদের উদ্দেশে লেখেন “ কারো কোথাও থাকতে আসুবিধা হলে কেপিসিতে নিশ্চিন্তে এসে আশ্রয় নিতে পারেন ।” ঐ দিনই বিশ্বনাথ ঘোষদস্তিদার সোশাল মিডিয়ায় নিজের ছবি পাল্টে লেখেন “ আই প্রটেস্ট দ্যা অ্যাটাক অন ডক্টরস”। বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার লেখেন, “তৃনমূল সাংসদের ছেলে এবং দলের সমর্থক হয়েও বলছি, তৃনমূলের কেও যদি চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে কোনরকম সমালোচনা করে থাকেন, তার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী”।
যদিও কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি পোস্ট টি সরিয়ে নেন। তৃনমূল সমর্থকদের এহেন মন্তব্যের জেরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, “ওদের দলটা এতটাই ৈস্বরাতান্ত্রিক যে কেও মুখ খুলতে পারেন না । তাই হইত অনেকের মতামত ছেলেমেয়েদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসছে ”। সিপিম নেতা সুজন চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো ডাক্তার, বিরোধী কারো কথাই শোনেন না । অন্তত নিজের দলের নেতা মন্ত্রীদের সন্তানদের কথাটা শুনুন । আর এসব যদি ওদের বাবা মায়েদের মত হয়, তাহলে তো আরও ভাল ”।
কিন্তু শাসক দলের কেউই তা মানতে রাজি নন । কাকলি ঘোষদস্তিদার বলেন, “ এসব ই ছেলেমেয়েদের ব্যাক্তিগত মতামাত । তাঁরা দলের সদস্যও নন ”। অপরদিকে শনিবার সাব্বা
হাকিম পুনরায় তাঁর এক বন্ধুর পোস্ট শেয়ার করেছেন, যেখানে লেখা আছে , “ মুখ্যমন্ত্রী কি আমাদের মানবিক অধিকার এর কথা জানেন ? ” এ ছাড়াও তিনি শেয়ার করেছেন এক ভিডিও ফুটেজ , যেখানে দেখা যাছে কর্মবিরতি আন্দোলনের মধ্যেও চিকিৎসকরাও পথদুর্ঘটনায় আহত এক ব্যাক্তিকে কিভাভে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছেন আরজিকর মেডিকেল কলেজে ।
এহেন জটিল পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান কামনা করে সাংসদ দেব শুক্রবার লিখেছিলেন, “ যারা আমাদের প্রাণ বাঁচান তারা কেন বারবার মার খাবেন ? ” এদিন সাংসদ মিমি চক্রবর্তীও তাঁর এক অভিজ্ঞতা কথা শেয়ার করেছেন । তিনি লিখেঞ্ছেন যে, তিনি এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে , উড়ান বাতিল এর পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল কিন্তু তাঁর চিকিৎসক তাঁকে দ্রুত আরোগ্যের পথ দেখিয়েছেন । শাসক দলেরই এক শীর্ষ নেতার মতানুজায়ী, “ ওঁদের অন্য এক সামাজিক পরিচিতি আছে , যা রাজনীতির ঊর্ধ্বে । যেকোনো বিষয়ে তাঁদের মতামত রাজনিতিকদের মতামত হিসাবে ধরে নিলে তা ভুল হবে । ” সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক চাপানোতর দিনদিন আরও জটিল আকার ধারণ করছে।