বিজেপি ছেড়ে দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন শোভন-বৈশাখী । কিন্ত দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করার জন্য শোভনকে আটকাতে হবে । দলের হাইকমান্ডের কাছ থেকে এই নির্দেশ পর কোনো সময় নষ্ট না করে সরাসরি মুখোমুখি বসলেন শোভন-বৈশাখীর সঙ্গে মুকুল রায় । আর তাতেই সমাধান বেরিয়ে এল । মুকুল রায় প্রমাণ করলেন তিনি এখনও বিজেপি রাজ্য ক্রাইসিস ম্যানেজার । তিনি হস্তক্ষেপ না করলে এতক্ষণে শোভন দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দিতেন । তারত আর যাইহোক বিজেপি-র ভাবমূর্তি নষ্ট হত । সেটা মুকুল রায় হতে দিলেন না ।
বৃহস্পতিবার রাতে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে বৈঠকের শেষেই ‘নিষ্কৃতি’ পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। পরে সংবাদমাধ্যমকেও সে কথা তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন। যোগদানের পর থেকে তাঁদের ঘিরে যে টানাপড়েন চলছিল দলের অন্দরে, তার জেরেই দল ছাড়ার কথা ভাবতে শুরু করেছিলেন শোভন-বৈশাখী। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলে নিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। গভীর রাত পর্যন্ত মুকুল রায়ের সঙ্গে বৈঠকের পরে শোভন-বৈশাখী জানিয়ে দিলেন, বিজেপিতেই আছেন, বিজেপির হয়েই কাজ করবেন।
নয়াদিল্লির সাউথ অ্যাভেনিউয়ে মুকুল রায়ের বাসভবনেই বৈঠক হয় সোমবার রাতে। নৈশভোজ এবং বৈঠক মিলিয়ে সাড়ে তিন ঘণ্টারও বেশি মুকুলের বাড়িতে ছিলেন শোভন ও বৈশাখী। রাত ১টার পরে সেখান থেকে বেরোন তাঁরা। তবে এই বৈঠকের দিকে নজর ছিল গোটা বাংলার রাজনৈতিক শিবিরের। তাই গভীর রাতেও দিল্লিতে মুকুলের বাড়ির সামনে হাজির ছিল মিডিয়া। মুকুল, শোভন ও বৈশাখী একসঙ্গেই মিডিয়ার মুখোমুখি হন।
দলের জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায় জানান, কোথাও কোনও সমস্যা নেই, শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিতেই আছেন। আর মেঘ কেটে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে বৈশাখীও বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের কথা আমার কাছে আদেশের মতো। তিনি যদি বলেন, ক্ষোভ-বিক্ষোভ সরিয়ে আপাতত দলের জন্য কাজ করতে হবে, তা হলে সেটাই আমার কাছে শেষ কথা।’’
বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্য বিজেপির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পর্যবেক্ষক অরবিন্দ মেনন গত কয়েক দিন ধরে নিরন্তর সক্রিয় ছিলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছিল ঠিকই। কিন্তু উত্তেজনা প্রশমনে কৈলাসও তৎপর হয়েছিলেন। এর মাঝেই নামনো হয় মুকুল রায়কে। মুকুল-শোভন দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সহকর্মী। তৃণমূলে থাকাকালীন শোভনদের অভিভাবকই ছিলেন মুকুল। সংবেদনশীল পরিস্থিতিতে শোভনদের আশ্বস্ত করতে মুকুলই যে সবচেয়ে কার্যকরী হবেন, তা বুঝে নিতে বিজেপি নেতৃত্বের অসুবিধা হয়নি।
কোন সূত্রে জট কাটল, তা নিয়ে মুখ না খুললেও মুকুল রায় সোমবার রাতে স্পষ্ট করে দেন যে, নেতৃত্বের নির্দেশেই তিনি শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। মুকুলের কথায়, ‘‘নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলেই আমি শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলাম। এই বৈঠকের জন্যই দিল্লিতে এসেছি, এমন নয়। অরুণ জেটলির পারলৌকিক ক্রিয়ায় উপস্থিত থাকতে দিল্লি এসেছিলাম। শুনলাম, শোভন আর বৈশাখী এখানেই আছেন। তাই ওঁদের নৈশভোজে ডাকলাম। বৈঠকে আমি বসতামই। কিন্তু ওঁরা দিল্লিতে থাকাকালীনই আমিও দিল্লিতে আসায় সেটা খুব দ্রুত হয়ে গেল।’’ বৈঠকে কী কথা হল? মুকুল বলেন, ‘‘নেতৃত্ব আমাকে কী বলেছেন, আমি শোভন ও বৈশাখীকে কী বলেছি, সেগুলো দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটা আপনাদের বলতে পারব না। শুধু বলতে পারি, ওঁরা বিজেপিতে ছিলেন, আছেন, থাকবেন। বাকিটা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।’’
শোভনও সেই সুরই বহাল রেখে বলেন, ‘‘মুকুলদা যদি কোনও কথা বলেন, তা হলে সেটা শোনা আমার কর্তব্য বলে মনে করি। আজও শুনলাম। তাঁর নির্দেশ মেনে চলার চেষ্টা করব।’’ জটিলতা কিছু থেকে থাকলে মুকুল রায়ই দায়িত্ব নিয়ে সেটার সমাধান করবেন, এই আস্থা তাঁর আছে— এমন মন্তব্যও করেন বেহালা পূর্বের বিধায়ক। আর বৈশাখী স্পষ্টই জানান যে, তাঁর ক্ষোভ ছিল। কিন্তু মুকুল রায় এমন এক জন ব্যক্তিত্ব, যিনি জানেন কী ভাবে সংগঠন ধরে রাখতে হয়। মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলার পরে তিনি যে দলের হয়ে কাজ করতে প্রস্তুত, তা-ও বৈশাখী স্পষ্ট করে দেন ।