এন‌আরসি

Paramanik Akash
সারা দেশে এন‌আরসি হবে। ঘোষণা করলেন কেন্দ্রীয় সরকার। আপাতত Enumerator দিয়ে বাড়ি বাড়িতে গিয়ে লোকদের নাম সংগ্রহ করবে। ধরে নিতে হবে এটাই এন‌আরসি’র প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।
মনে করুন, আপনি এখন কোলকাতায় যাদবপুরে থাকেন।  আপনার নাম গৌতম দাস। আপনাদের পরিবারে পাঁচ ভাই এবং তিন বোন। আপনার বাবার নাম প্রতুল দাস এবং ঠাকুর্দার নাম সতীশ চন্দ্র দাস। আপনারা বহু বছর ধরেই কোলকাতায় মধ্যমগ্রামে ছিলেন এবং দশবছর হলো যাদবপুর থাকেন। আপনার ভাই বোনেরা বিয়ে হয়ে যাওয়ায় যে যার মতো করে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু একটা সময়, সবাই মিলে মধ্যমগ্রামে থাকতেন মা বাবা ঠাকুরদা সহ। মধ্যমগ্রাম থেকে চলে আসার সময় ইলেকশন অফিসে জানিয়ে আসেন নি যে আপনাদের পরিবারের কেউ এখন আর মধ্যমগ্রামে থাকেন না। যাদবপুর কেউ শিলিগুড়ি বা কেউ ভারতবর্ষে অন্যত্র চলে গেছে। মধ্যমগ্রাম কোনো একটা সেন্টারে ভোটার তালিকায় আপনাদের পরিবারের সবার নাম ছিল। এরপর হয়তো কয়েকবার ভোট হয়ে গেছে মধ্যমগ্রামে। আপনাদের অর্থাৎ গৌতম দাস ও তার পরিবারের লোকদের পাওয়া গেলো না মধ্যমগ্রামে। গৌতম বাবুর নামের আগে পড়ে যেতে পারে ‘ডি’ অর্থাৎ ডি ভোটার। পুলিশ গৌতম দাস কে মধ্যমগ্রামে খুঁজে পেলেন না তাকে নোটিশ ধরানোর। দু’বার যাওয়ার পর বা না গিয়ে ও সেই গ্রামের দুজন লোকের সাক্ষী রেখে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে গৌতম দাস কে একতরফা রায় দিয়ে বিদেশি ঘোষণা করতে পারে। ডি ভোটার হলে তার সমস্যার সমাধান করতে হবে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। গরিব মানুষেরা জানেন না ‘ডি’ থাকলে কী করতে হয়।
এখানে উল্লেখ করার বিষয় হচ্ছে, আপনারা যদি জায়গা পরিবর্তন করে থাকেন, অর্থাৎ ধরুন মধ্যমগ্রাম থেকে যাদবপুর বা শিলিগুড়ি – তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা সেই জায়গার ইলেকশন অফিসে ( মধ্যমগ্রাম) জানিয়ে রাখুন যে আপনারা যাদবপুর বা শিলিগুড়ি থাকেন ( উদাহরণ স্বরূপ) এবং সেইখানেই এখন ভোট দেন।
একটু খেয়াল করুন. গৌতম দাসের বাবার নাম প্রতুল দাস এবং ঠাকুর্দার নাম সতীশ চন্দ্র দাস । গৌতম এবং প্রতুল ‘চন্দ্র ‘ ব্যবহার করলেন না। আবার কোনো একটা ভোটার লিস্টে দেখা গেল প্রতুল চন্দ্র দাস বা ভুলবশত পুতুল দাশ লেখা আছে। একবার পুতুল তো আরেকবার প্রতুল। একবার ‘দাস’ তো আরেকবার ‘দাশ’ লেখা। একটা Megistrate level Affidavit করে নিয়ে লিখে রাখুন পুতুল দাস এবং প্রতুল চন্দ্র দাস/দাশ একই ব্যক্তি। এইভাবে বাড়ির প্রত্যেকের নিজের নাম, বয়স, মা বাবার সাথে সম্পর্কের কাগজপত্র ঠিকঠাক রাখতে হবে।
ভোটার লিস্টে বয়সের হেরফের থাকবেই বিশেষ করে গরিব অসহায় নিরক্ষর মানুষের ক্ষেত্রে, কেন না এই গরিব মানুষেরা নিজেদের বয়স ঠিক করে বলতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গে এন‌আরসি হলে ভিত্তিবর্ষ ১৯৭১ সনের ২৫ মার্চ হবে না যতক্ষণ না নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করা হবে। সে যাই হোক, ভিত্তিবর্ষ একটা তো ঠিক হবেই।
গরিব মানুষের কাছে জন্মের সার্টিফিকেট না থাকলে যদি সেই পরিবারের ছেলেমেয়েরা কোনো স্কুলে পড়ে বা একটা সময় পড়তো, তাহলে সেই স্কুল থেকে একটা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে রাখুন। স্কুলে ছেলেমেয়েদের জন্মের একটা তারিখ দিয়ে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে মা – বাবার নাম থাকে। খেয়াল রাখতে হবে নামগুলো সব ঠিকঠাক আছে কী না।
সমস্যা হবে বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে। মেয়েদের ক্ষেত্রে আগে ২১ বছর এবং বর্তমান ১৮ বছর হলে বিয়ে হওয়ার কথা। গরিব মানুষের মেয়েদের বিয়ে অনেক আগেই হয়ে থাকে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে। ভোটার লিস্টে নাম ওঠে ১৮ বছর হওয়ার পর।  মনে করুন মেয়েটির নাম সাবিনা খাতুন। বাবার নাম বটু মিঞা আর মায়ের নাম  আয়েশা বেগম। সাবিনার  বিয়ে হলো ১৮ বছর হওয়ার আগেই। পরবর্তীতে ভোটার লিস্টে মেয়েটির অভিভাবক হিসেবে তার স্বামীর নাম থাকবে। বাবার নাম কিন্তু থাকবে না। তাহলে সাবিনা খাতুনের সঙ্গে তার বাবার বা মায়ের সম্পর্কের কী কী কাগজপত্র আছে। একমাত্র PAN CARD – এ বাবার নাম থাকে। সেক্ষেত্রে ও খেয়াল রাখতে হবে। বাবার নাম বটু’র জায়গায় বাটু না হয় পড়ে । সেক্ষেত্রে PAN CARD  ঠিক করে নিতে হবে। যদি বটু মিঞার কাছে রেশন কার্ড থাকে সেখানেও দেখতে হবে আয়েশা বেগম এবং সাবিনা খাতুনের নাম আছে কী না এবং সম্পর্কের জায়গা গুলো ঠিক আছে কি না। মা – আয়েশা’র সঙ্গে তার নিজের বাবার সঙ্গে সম্পর্কের কাগজপত্র লাগবে।
রেশন কার্ড , পুরনো এলআইসি, পোস্ট অফিসের পাস বুক, পুরনো ব্যাঙ্ক একাউন্টের পাসবুক, পুরনো জমি কেনার দলিল, সরকার প্রদত্ত কোনো দলিল – এখন থেকেই জোগাড় করার চেষ্টা করুন।
এই কাজগুলো কংগ্রেস বামফ্রন্ট তৃণমূল বিজেপি থেকে শুরু করে যত গণসংগঠন আছে ক্লাব আছে সবাইকে করতে হবে, বিশেষ করে গ্রামেগঞ্জে। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের গ্রামেগঞ্জে অল্প বিস্তর সংগঠন আছে। কাজে লেগে পড়ুন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ।



Find Out More:

nrc

Related Articles: