অগ্নিগর্ভ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
এদিন যাদবপুর পরিচয় দিলো চরম নৈরাজ্যর। শিক্ষাঙ্গনে পড়ুয়াদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিগ্রহ, উপাচার্যের সঙ্গে বাদানুবাদ, মন্ত্রীকে ‘উদ্ধার’ করতে খোদ রাজ্যপালের ছুটে যাওয়া এবং সুযোগ বুঝে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ— বৃহস্পতিবার নৈরাজ্যের বেনজির দৃষ্টান্ত তৈরি হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বাবুল সুপ্রিয়কে এ দিন প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় পড়ুয়াদের হাতে। তিনি এবং অগ্নিমিত্রা পল দু’জনেই ছাত্রদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন বলে অভিযোগ। রাতে বাবুলকে বার করে আনতে গিয়ে ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীপ ধনখড়ও। আধ ঘণ্টারও বেশি আটকে থাকার পরে পুলিশের কনভয় গাড়ি ঘুরিয়ে দিয়ে তাঁদের ক্যাম্পাস থেকে বার করে।
রাজ্যপাল ক্যাম্পাসে ঢোকার সময়েই লোকজনের অসংযত আচরণ চোখে পড়ে। রাজ্যপাল যখন ক্যাম্পাসের চার নম্বর গেট দিয়ে এবিভিপি এবং বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দল বাইরে থেকে ঢুকে তাণ্ডব শুরু করে। টায়ার জ্বালিয়ে ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। বাঁশ, লাঠি হাতে আর্টস ফ্যাকাল্টির ছাত্র সংসদের ঘর ভাঙচুর করে। দেওয়ালে চে গেভারার ছবি নষ্ট করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ এবং কার্ল মার্ক্সের ছবি টেনে নামিয়ে আগুনে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ইউনিয়নের ঘরের দেওয়াল এবিভিপি লিখে ভর্তি করে দেওয়া হয়। রাজা এস সি মল্লিক রোডে শুরু হয় অবরোধ।
ঘটনার মূলে ছিল কে পি বসু মেমোরিয়াল হলে এবিভিপি-র আয়োজিত একটি আলোচনাচক্র এবং নবীনবরণ অনুষ্ঠান। সেখানে এ দিন প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় (আমন্ত্রণপত্রে লেখা সঙ্গীতশিল্পী) এবং অতিথি ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পল। বেলা ২টো ৫০ নাগাদ বাবুল পৌঁছন। হলের সামনে তার আগে থেকেই শ্রমণ গুহ, দেবরাজ দেবনাথ, সোমাশ্রী চৌধুরীর মতো পড়ুয়াদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের সদস্য জড়ো হয়েছিলেন। কয়েক জন টিএমসিপি সমর্থককেও সেখানে দেখা যায়। অন্য দিকে বাবুলকে স্বাগত জানাতে ক্যাম্পাসে হাজির ছিল এবিভিপি-র বাইক বাহিনীও। তাদের একাংশ ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে অভব্যতা করে বলে অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে শুরু করে। বাবুল গাড়ি থেকে নামতেই পড়ুয়ারা তাঁকে ঘিরে ধরে ‘বাবুল গো ব্যাক, রোহিত ভেমুলার খুনি গো ব্যাক, এনআরসি গো ব্যাক’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। বাবুলের সঙ্গে জ়েড ক্যাটেগরির নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। ধাক্কাধাক্কির মধ্যে তাঁদের এক জনের বন্দুক থেকে কার্তুজভর্তি ম্যাগাজিন খুলে পড়ে যায়। তাঁর শাড়ি ধরে টানা হয় বলে অগ্নিমিত্রার দাবি। বাবুলকে কার্যত ধাক্কা মারতে মারতে ‘গ্রিন জ়োন’ নামে পাশের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু ক্ষণ পরে সেখানে যান উপাচার্য সুরঞ্জন দাস এবং সহ-উপাচার্য প্রদীপকুমার ঘোষ। বাবুলের সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা। বাবুল প্রেক্ষাগৃহে ঢুকতে গেলে তাঁকে ফের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।