এমনকি তারা সিআইডি-র এডিজি-র সন্ধান্ পেতে কথা বলেছে রাজীবের স্ত্রীর সঙ্গেও।

Paramanik Akash
 রাজীব কুমার আইপিএস অফিসার । তাঁর মূল কাজ দুস্কৃতির দমন এবং আইন-শৃঙ্খলা সুষ্ঠভাবে বজায় আছে কিনা তা দেখা । সেই রাজীব কুমার এখন কোথায় ? কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা খুনের আসামী ধরার মত করে তাঁর পেছনে ছুটছে । যাঁর কাজ আসামী ধরা তিনিই কিনা লুকিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । আজ শুক্রবারও রাজীব কুমারের নাগাল পেতে সিবিআই কলকাতা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন ৫ দল হানা দিয়েছে । রাজ্যের ছয় জায়গা তল্লাশী চালানো হয়েছে । এমনকি তারা সিআইডি-র এডিজি-র সন্ধান্ পেতে কথা বলেছে রাজীবের স্ত্রীর সঙ্গেও।
রাজীবের গ্রেফতারিতে কোনও বাধা নেই। বৃহস্পতিবার এ কথা জানিয়েছিল আলিপুর আদালত। এর পর শুক্রবার সকাল থেকেই রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধানকে ধরতে কার্যত আদাজল খেয়ে লেগে পড়ে সিবিআই। সরকারি বাসভবন থেকে বেসরকারি রিসর্ট, হোটেল থেকে আইপিএস কোয়ার্টার্স— সিবিআইয়ের আতসকাচ থেকে বাদ পড়ছে না কোনওকিছুই।
রাজীবের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার জন্য সিবিআইয়ের আর্জি বৃহস্পতিবার খারিজ করে আলিপুর আদালত। আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারের গ্রেফতারিতে সিবিআইয়ের সামনে কোনও বাধা নেই বলেই জানিয়ে দেন আলিপুর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সুব্রত মুখোপাধ্যায়। আদালতের রায় শুনে গতকাল রাত থেকে সল্টলেকে সিবিআই কার্যালয় সিজিও কমপ্লেক্সে চূড়ান্ত তৎপরতা শুরু হয়। অভিযান চালানোর জন্য তৈরি করা হয় সিবিআই আধিকারিকদের পাঁচটি দল। সিজিও কমপ্লেক্সে খোলা হয়বিশেষ একটি কন্ট্রোল রুম। এমন কন্ট্রোল রুম তৈরি করার ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন বলেই মনে করা হচ্ছে। সিবিআইতে দীর্ঘ দিন কাজ করা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘নন্দীগ্রাম, নেতাই বা জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনার মতো হাই প্রোফাইল মামলার তদন্তের সময়েও অভিযুক্তকে ধরতে এমন কন্ট্রোল রুম খোলার কথা মনে করতে পারি না।’’
ওই কন্ট্রোল রুম থেকেই অভিযানে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আধিকারিকদের। সিবিআইয়ের পদস্থ আধিকারিকদের একটি দল সেখান থেকে গোটা অভিযান পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন সূত্রে তদন্তকারীদের কাছে যখন যেমন তথ্য বা ইনপুট আসছে, সেই অনুযায়ী অভিযানে যাওয়া আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে ওই কন্ট্রোল রুম থেকেই।
আদালতে গতকাল রাজীবের আইনজীবীরা যে ওকালতনামা পেশ করেন, তাতে সই ছিল তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা কুমারের। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই ওকালতনামার সূত্র ধরেই এ দিন রাজীবের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন গোয়েন্দারা। তিনি কোন ফোন নম্বর ব্যবহার করছেন বা এই মুহূর্তে কোথায় আছেন, সে বিষয়েই কথা হয়েছে বলে সিবিআই সূত্রে খবর।
পাশাপাশি আগের কয়েক দিনের মতো রাজীবের খোঁজে এ দিনও পার্ক স্ট্রিটে রাজীবের সরকারি আবাসন, ক্যামাক স্ট্রিটের বিভিন্ন জায়গার সঙ্গে শহরতলিতেও হানা দেন তদন্তকারীরা। একটি দল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুরের এক বিলাসবহুল রিসর্টে হানা দেয়। সেখানকার নথি খতিয়ে দেখেন গোয়েন্দারা। দীর্ঘক্ষণ রিসর্টে তল্লাশি চালানো হয়। গোয়েন্দাদের অন্য একটি দল রায়চক, বজবজের দিকেও অভিযানে যায় বলে সিবিআই সূত্রে খবর। এত দিন পর্যন্ত নিজস্ব সূত্র, মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে রাজীবের খোঁজ চালাচ্ছিলেন গোয়েন্দারা। শুক্রবার তার সঙ্গে কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও সূত্রের খবর।
সিবিআইয়ের একটি সূত্রে খবর, রাজীব কুমার যে নম্বরগুলি ব্যবহার করতেন, সেগুলি অন্য একাধিক নম্বরে ফরওয়ার্ড করে রাখা হয়েছে। ফলে মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে তাঁর গতিবিধি বা উপস্থিতি বোঝা যাচ্ছে না। তাই তাঁকে ধরতে মূলত নিজেদের সূত্রের উপরেই নির্ভর করছেন গোয়েন্দারা।
এর মধ্যেই রাজীব আবার আলিপুর জেলা আদালতে আগাম জামিনের আর্জি জানিয়েছেন। সেই মামলার শুনানি শনিবার। ফলে তার আগেই রাজীবকে নিজেদের হেফাজতে পেতে মরিয়া সিবিআই। সেই উদ্দেশ্যেই শহর-শহরতলির বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা।


Find Out More:

Related Articles: