নির্মাণের পর বর্ধমান রেলওয়ে ওভারব্রীজ রেলকে হস্তান্তরই হলো না,উদ্বোধন হয়ে গেলো মুখ্যমন্ত্রীর হাতে -বিতর্ক

Paramanik Akash
প্রতিশ্রুতিমতো বহু প্রতীক্ষিত বর্ধমান রেলওয়ে ওভারব্রীজের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মেদিনীপুরের বীরসিংহ গ্রাম থেকে এই ব্রীজের উদ্বোধন করেন তিনি।তিনি এও জানিয়ে দেন, আর কোনো দ্বিতীয় উদ্বোধন হবে না। এরপরেও যদি কেউ আসে তাহলে আমাদের অফিসাররা তাদের ব্রীজ সহ এ‌্যাপ্রোচ রোড ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবেন – কত ভাল কাজ হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যে থেকে বর্ধমান রেলওয়ে ওভারব্রীজের উদ্বোধন নিয়ে ওঠা কেন্দ্র - রাজ্য বিতর্ক তীব্র হতে শুরু করে। যদিও বর্ধমান রেলওয়ে ওভারব্রীজ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর এরপরেও জিইয়ে রইলো বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহাল মহল। 
অন্যদিকে, রেলের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, রেলের ওপর ঝুলন্ত এই সেতু নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড রেলকে এখনও এই সেতু সরকারি ভাবে হস্তান্তরই করেনি। সূত্রের খবর, চালু করার আগে এখনও প্রযুক্তিগগত কিছু চূড়ান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা বাকি রয়েছে তাদের। কিন্তু তার আগেই তড়িঘড়ি এই সেতুর আপ্রোচ রোড সহ সেতুর উদ্বোধন রাজ্য সরকার করে দেওয়ায় কার্যতঃ সেতুর নিরাপত্তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর এই সেতুর আনুষ্ঠানিক ঊদ্বোধন করার কথা খোদ কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েলের।রেল সূত্রে জানা গেছে, নির্মাণকারী সংস্থার চূড়ান্ত রিপোর্ট রেল দপ্তরে জমা পরার পরই এই সেতুর উদ্বোধন হওয়ার কথা।
এদিন বর্ধমান শহরে এই ব্রীজের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নির্দেশ মত তিনিই প্রদীপ জ্বেলে ফিতে কেটে উড়ালপুলের উদ্বোধন করেন। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে সুব্রত মুখোপাধ্যায় দাবী করেছেন, এই প্রকল্পের জন্য সিংহভাগ টাকাই দিয়েছে রাজ্য সরকার। এমনকি খোদ মমতা বন্দোপাধ্যায়ই এই ব্রীজের নকশার অনুমোদন করেছেন। এদিন সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, এই দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পরই এই ধরণের একটি সেতু গোটা দেশের কাছে গর্ব। তিনি চান, খোদ মুখ্যমন্ত্রী যাঁর কল্পনাপ্রসূত এই ব্রীজ তিনি নিজে হেঁটে ব্রীজে উঠুন। এরই পাশাপাশি আবেগ আপ্লুত সুব্রতবাবু এদিন ঘোষণাও করেন, তাঁর ক্ষমতায় থাকলে তিনি ব্রীজের নামকরণ মমতা বন্দোপাধ্যায়ের নামেই করতেন। এদিকে, এদিন ব্রীজের উদ্বোধন হলেও বিতর্ক আরও তুঙ্গে উঠল। কারণ, এদিন উদ্বোধন পর্বের সঙ্গে সঙ্গেই ব্রীজের বিভিন্ন এ্যাপ্রোচ রোডে রেলের ব্যারিকেডকে সরিয়ে দেওয়া হয় জেলাশাসক বিজয় ভারতীর নির্দেশে। একদিকে, যখন ব্রীজের উদ্বোধন পর্ব হয়েছে সেই সময় এদিনই ব্রীজের কিছু কিছু জায়গায় কর্মীদের কাজ করতে দেখা গেছে। 
উল্লেখ্য, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে তৈরী এই প্রকল্পের মোট খরচ হয়েছে ২৮৭.৮৯ কোটি টাকা। অথচ এদিন এই উড়ালপুল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ছিলেন না কোনো রেলের প্রতিনিধি। এমনকি বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার সাংসদ সুরেন্দ্রজিত সিং অহলুবালিয়াকেও কোনো আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলে বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এদিন বর্ধমান ষ্টেশন ম্যানেজার স্বপন অধিকারী জানিয়েছেন, এব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারবেন না, যা বলার রেলদপ্তরের আধিকারিকরাই বলবেন। 
অপরদিকে, রেল সূত্রে জানা গেছে, এই ব্রীজ নির্মাণকারী সংস্থা রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড সোমবারই জানিয়েছে, এখনও ব্রীজের ভার বহন ক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়নি। যে কেবল লাগানো হয়েছে তা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা বিশেষজ্ঞ দিয়ে তা পরীক্ষা করা হয়নি।৬টি পিলার সম্পর্কেও এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে। ট্রাফিক ও গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিও এখনও খতিয়ে দেখা হয়নি। এছাড়াও ব্রীজের নিরাপত্তার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা বাকি রয়েছে। তাই সোমবারই তাঁরা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় এখনও ব্রীজ চালুর জন্য কয়েকদিন প্রয়োজন। 
এদিকে, রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের পক্ষ থেকে এই চিঠি সম্পর্কে এদিন অনুষ্ঠানে আসা রাজ্য সরকারের পূর্ত দপ্তরের চীফ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, এব্যাপারে রেল বিকাশ নিগম লিমি্টেড তাঁদের কিছু জানায়নি। বরং তাঁরা জানিয়েছিল ব্রীজ উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত। যে কোনোদিনই চালু করা যেতে পারে। তারপরই সোমবার এই ঘোষণা করা হয়।উল্লেখ্য, মঙ্গলবারই বর্ধমানের এই রেল সেতু উদ্বোধনের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২০ টি ডায়ালিসিস মেশিন ইউনিটেরও উদ্বোধন করেন।


Find Out More:

Related Articles: