পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পর ; প্রশ্ন সোমেনের উনি কোথাকার মুখ্যমন্ত্রী ? উনি চান পুলিশ দলের ক্যাডারের মত কাজ করুক মন্তব্য দিলীপের ; তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করবে পুলিশ ? প্রশ্ন সুজনের

Paramanik Akash
বিরোধীরা এতদিন অভিযোগ করছিল যে পুলিশ দলদাসে পরিণত হয়েছে । এবার ঠিক উল্টো অভিযোগ করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেছেন পুলিশ তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করছে । যেটা কোনোভাবেই কাম্য নয় । তিনি ঝাড়গ্রাম থানার আইসিকে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছেন । তিনি নাকি কাজের চেয়ে অকাজ করছেন বেশি বলে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন । আর এই মন্তব্যের পরেই বিরোধীরা তৃণমূল সরকার ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা তীব্র ভাষায় করেছেন ।
সরাসরি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হওয়া প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশ অফিসারকে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ধমক দিয়েছেন, তার নিন্দাতেও সরব হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর উচিত সরকারি কর্তাদের বা পুলিশের মনোবল বাড়ানো। তার বদলে সবার সামনে যে ভাবে তিনি অপমান করলেন এক জন পুলিশ অফিসারকে, তাতে ওই অফিসার আর কাজ করতে পারবেন?’’ দিলীপের কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান পুলিশ তাঁর দলের ক্যাডার হিসেবে কাজ করুক। সেটা না হলেই ওঁর রাগ হয়ে যাচ্ছে।’’
পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধমক ‘বিস্ময়কর’— মনে করছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, এ রাজ্যে ঠিক তার উল্টোটাই তো ঘটে! বিরোধী দলগুলির কর্মীদেরকে যখন তখন হেনস্থা করে পুলিশ। আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমরা যখন থানায় যাই, তখন পুলিশ এফআইআর–ই নিতে চায় না। যদি বা এফআইআর নেয়, পদক্ষেপ কিছুতেই করে না।’’ দিলীপ আরও বলেন, ‘‘আমাদের বিরুদ্ধে ২৮ হাজার মামলা দিয়ে রেখেছে গোটা রাজ্যে। তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক’টা অভিযোগ পুলিশ নেয়? মুখ্যমন্ত্রী তথ্য চাইলে দিয়ে দিতে পারি।’’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রও তীব্র কটাক্ষ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে। পুলিশ সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য শুনে সোমেনের বক্তব্য, ‘‘তিনি কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারছি না। পুলিশ সম্পর্কে যে কথা তিনি বলছেন, সে রকম কিছু এ রাজ্যে হয় বলে তো শুনিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এখন নিজেকে অন্য কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ভাবছেন?’’ সোমেনের অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যে বিরোধী দলের ছেলেগুলোকে সব জেলায় মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। আর তৃণমূলের অনুব্রত পুলিশকে থাপ্পড় মারছেন। এই হচ্ছে এ রাজ্যের পুলিশের অবস্থা। কিসের ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী কী বলছেন, জানি না।’’ 
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কটাক্ষ, ‘‘শুনলাম বিদ্যাসাগরের জন্মভিটেয় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, বিদ্যাসাগর জ্যোতির্বিজ্ঞানী ছিলেন। আর ডহরবাবুর গল্প তো আমরা সবাই জানি। তাই মুখ্যমন্ত্রী কখন কী বলেন, সে কথার কী অর্থ হয়, সেটা শুধু তিনি নিজেই বলতে পারবেন। আমরা পারব না।’’
বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর গলাতেও একই সুর। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আবোলতাবোল কথা বলছেন। তাঁর কথার কী জবাব দেব!’’ সুজনের কথায়, ‘‘তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করবে পুলিশ? তৃণমূলের বিরুদ্ধে কোনও এফআইআর–ই নেওয়া হয় না। এই সব কথা বলে মুখ্যমন্ত্রী আসলে পুলিশকে ধমকাচ্ছেন। পুলিশ যাতে আরও বেশি করে দাসত্ব করে, সেটা নিশ্চিত করতে চাইছেন।’’
তৃণমূল স্বাভাবিক ভাবেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকেই সমর্থন করছে। যে জেলায় বসে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন পুলিশকে ধমকেছেন, সেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যা বলেছেন, তা তথ্যের ভিত্তিতেই বলেছেন, শান্তি রক্ষার স্বার্থেই বলেছেন। এ নিয়ে বিরোধীদের উষ্মা প্রকাশ করার কোনও কারণ নেই।’’


Find Out More:

Related Articles: