মাতৃত্বকালীন ছুটি না থাকায় চাকরি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে

Biswas Riya

দক্ষ পারদর্শী হওয়া স্বত্বেও সরকারি হাসপাতালের রোগী সহায়করা কাজ ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন শুধুমাত্র মাতৃত্বকালীন ছুটি না থাকার কারনে।

যদিও রোগীদের সুষ্ঠু পরিষেবা প্রদানে রোগী সহায়কেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। গর্ভবতী মহিলাদের রক্তপরীক্ষা, ওষুধ প্রদান, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানোর প্রশ্নে যাঁরা সহায়ক হন, তাঁদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বলে কিছু নেই! রোগী সহায়কদের একাংশের অভিযোগ, চাকরি ও মাতৃত্বের দোটানায় কাজ ছাড়তে তাঁরা বাধ্য হচ্ছেন।

যেমনটা ঘটেছে লেডি ডাফরিন হাসপাতালে, ২০১৩ সালে রোগী সহায়কের কাজে যোগ দেন নিরুপমা রাজ। সেই কর্মজীবনে ছেদ টানল নিরুপমার মাতৃত্বের ইচ্ছাপূরণ। রবিবার নিরুপমা বলেন, ‘‘অনেক আফশোস নিয়ে মাস চারেক আগে চাকরিটা ছাড়লাম।’’

রোগী সহায়কেরা জানান, এই পরিস্থিতিতে পরিবর্ত দেওয়ার একটা চল রয়েছে। কিন্তু মাস সাতেক কাজ করার পরে পরিবর্ত যদি কাজ না ছাড়েন তা হলে কিছু করার থাকে না। সম্ভবত সে জন্য ঝুঁকি না নিয়ে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভাইকে পরিবর্ত হিসাবে বেছে নিয়েছেন এনআরএসের রোগী সহায়ক জ্যোতি সাহু। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘ভাই শুধু আমার জন্য রাজি হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ই যদি না থাকে তা হলে মেয়েদের অগ্রগতি নিয়ে এত প্রচার কেন!’’ 

একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি সঞ্জয় মজুমদার বলেন, ‘‘মাতৃত্বকলীন ছুটি দিতে আপত্তি নেই। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের নির্দেশিকায় তার কোনও সুযোগ নেই। আমরা ছুটি দিলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানবে না। লোক চাইবেন।’’

চাকরি বাঁচাতে আত্মীয়কে পরিবর্ত হতে রাজি করিয়েছেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী সহায়ক ঊর্মিলাও। তাঁর কথায়, ‘‘মাতৃত্বকালীন ছুটি চাওয়া কি খুব বড় দাবি!’’ আলিপুরদুয়ারের রোগী সহায়ক মালবিকা বর্মণের অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় শারীরিক জটিলতার কারণে মালবিকা ১২ দিন কাজে আসতে পারেননি। তার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ওই রোগী সহায়ককে গত জুলাইয়ে বরখাস্তের চিঠি ধরিয়েছে বলে অভিযোগ।

পশ্চিমবঙ্গ রোগী সহায়ক সমিতির রাজ্য সম্পাদক মিঠুন ঘোষ বলেন, ‘‘মাতৃত্বকালীন ছুটি মহিলার অধিকার। সেটা না থাকা দুর্ভাগ্যজনক।’’ স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দফতর চুক্তির ভিক্তিতে যাঁদের নিয়োগ করেন তাঁরা এই সুবিধা পান। কিন্তু রোগী সহায়কদের আউটসোর্স করা হয়। তাঁদের এই সুযোগসুবিধা দেওয়ার নানা জটিলতা রয়েছে। বলতে পারেন, ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই।’’

 


Find Out More:

Related Articles: