দীপাবলিতে রেজাউলের পরিবারে আলো জ্বালালেন ফলতার আইসি

GHOSH ARPAN

পুলিশ খারাপ। পুলিশের বিরুদ্ধে হাজারও অভিযোগ তোলেন সাধারণ মানুষ। অভিযোগও জমা হয় বিস্তর। কিন্তু প্রকৃত পুলিশের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। দীপাবলির দিনেই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার থাণ্ডার পাড়ার মোল্লা পরিবারে আজ যেন সত্যি আঁধার কাটিয়ে আলো জ্বলে উঠেছে। ১০ দিনের দমবন্ধ করা অস্থির পরিস্থিতি শেষে আলোর দিশা। সৌজন্যে ফলতা থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা। বিষয়টা কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ? তাহলে একটু খুলেই বলা যাক।

 

শনিবার রাত। নাইট পেট্রোলিং করে থানায় ফিরছিলেন ফলতা থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা। থানা থেকে বেশ কিছুটা দূরেই গাড়ি করে যাওয়ার সময় দেখতে পান রাস্তার পাশে পড়ে রয়েছে কোনও এক ব্যক্তি। প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছিল কোনও মদ্যপ। তবে গাড়ি নিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে জাননি তিনি। গাড়ি থেকে নেমে কী অবস্থায় রয়েছে ওই ব্যক্তি তা দেখতে গিয়েছিলেন। না, প্রাথমিক অনুমান একেবারেই ধোপে টেকেনি। কোনও মদ্যপ ব্যক্তি নয়, একেবারে সুস্থ এক জন। রাস্তাতে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন ফলতা থানার আইসি। কিন্তু কয়েকটি প্রশ্ন করতেই একটু অগোছালো উত্তর স্পষ্ট। কিছুক্ষণ পরেই বিষয়টি বোঝা যায়। ওই ব্যক্তি ‘ডিফারেন্টলি এবেল’।

 

না, ফেলে চলে যাননি তিনি। আবারও পুলিশের মানবিক মুখ দেখল ফলতা। আইসি দায়িত্ব নিয়ে থানায় নিয়ে যায় ওই ব্যক্তিকে। বারবার জিজ্ঞাসাবাদ করেন, ওই জেলার অন্য থানায় বেশ কয়েক বছর থাকার সুবাদে কিছু এলাকা নখদর্পণে। তাই প্রকৃত পরিচয় জানতে পারেন ওই ব্যক্তির। নাম –রেজাউল মোল্লা। মহেশতলা থানার সন্তোষপুরের থাণ্ডার পাড়ার বাসিন্দা সে। পরিবারকে খবর দিলে রবিবার দীপাবলির দিন রেজাউলকে থানা থেকে এসে নিয়ে যায় তাঁর আপনজনরা। জানা যায়, গত দশ দিন ধরে নিখোঁজ ছিল রেজাউল। চারিদিক তন্য তন্য করে খুঁজেও খোঁজ মিল ছিল না তাঁর। পরিবারে যখন আঁধার নেমেছে রেজাউলের নিখোঁজের ঘটনায়, তখন ফলতার আইসি যেন তাঁদের ঘরের আলোকে ফিরিয়ে দিলেন। সকলের যে বড় আদরের রেজাউল। তাই তো বাড়ি ফেরার আগে ফলতার আইসির কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকার কথা জানিয়ে গেলেন রেজাউলের ভাই বাপি মোল্লা। বললেন, পুলিশ যে এরকমও হয় তা আমার দেখা প্রথম। আল্লা ওঁনার ভালো করুক।

 

আর এই ঘটনায় খুশি ফলতা থানার পুলিশ কর্মীরাও। তাঁদেরও দীপাবলি একেবারে অন্য মাত্রায় গিয়েছে এদিনের ঘটনায়। খুশি এলাকার মানুষও। সবার মুখে – মানবিক পুলিশ। আর থানার আইসি রামেশ্বর ওঝা জানালেন, পুলিশের প্রাথমিক কর্তব্য করেছি। মানুষের পাশে থাকাই তো আমাদের কাজ। রেজাউলকে পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরেছি এখানেই আমাদের সার্থকতা।

 

ছবি : লাল-কালো টি-শার্টে রেজাউল মোল্লা


Find Out More:

Related Articles: