কাশ্মীরের আর এক রূপ বন্ধুত্বের

frame কাশ্মীরের আর এক রূপ বন্ধুত্বের

Biswas Riya

গত এপ্রিলে সাগরদিঘির বাহালনগর থেকে কাশ্মীরে গিয়েছিলেন নুর।কিন্তু জঙ্গি হানার পর ফিরতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিরব বললেই কি ফেরা যায়?

নুর সালাম শেখের মুখে বিজয়ীর হাসি, ‘‘আলবাত যায়। যদি পাশে থাকে কাশ্মীরের দোস্তরা!’’

নুরের কথাটা নেহাত কথার কথা নয়। কাশ্মীর থেকে তাঁর বাড়ি পৌঁছতে সময় লাগে পাক্কা চার দিন। কাশ্মীরের দোস্তদের সৌজন্যে তিনি মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই বাহালনগরের বাড়িতে চলে এসেছেন। শনিবার বাড়ির উঠোনে বসে নুর বলছেন, ‘‘দোস্তরাই বিমানের টিকিট কিনে আমার হাতে ধরিয়ে দিল। জানেন, জীবনে এই প্রথম বিমানে উঠলাম!’’

বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, মা ও দুই ছেলেমেয়ে। কাশ্মীরে জঙ্গিদের হাতে পাঁচ জনের খুন হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকেই নাওয়া-খাওয়া ভুলেছিলেন নুরের বাড়ির লোকজনও। নুরের স্ত্রী রেহেনা বিবি বলছেন, ‘‘ওর কাছে ফোন থাকে। কিন্তু সব সময় যোগাযোগ করা যায় না।”

কাশ্মীরের কুলগামে আপেল বাগানে কাজ করতেন নুর। তিনি বলছেন, “জঙ্গি হামলার কথা জানতে পারি বুধবার সকালে। তখন চেষ্টা করেও বাড়িতে ফোন করতে পারিনি। তার পরেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিই। বৃহস্পতিবার ট্রেনে উঠলে রবিবারের মধ্যে হয়তো পৌঁছে যেতাম। কিন্তু বেরোতে দেয়নি ওই বন্ধুরা।”

তাঁদেরই এক জন কুলগামের বাসিন্দা নাজিমুদ্দিন শেখ। তিনি ও স্থানীয় আরও কয়েক জন মিলে চাঁদা তুলে নুরের জন্য ৯৫১৫ টাকা দিয়ে বিমানের টিকিট কিনে ফেলেন। শুক্রবার খুব সকালে গাড়িতে তাঁরাই নুরকে শ্রীনগরে পৌঁছে দেন। সেখান থেকে বিমান ধরে দুপুরে কলকাতা পৌঁছন নুর। তার পরে রাত ৯টা নাগাদ বাহালনগর।

ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে পাড়া। গোটা বাড়ি ডুবে রয়েছে অন্ধকারে। দুয়ারে কড়া নাড়ার আওয়াজ পেতেই আলো জ্বলে ওঠে। নুরকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন বাড়ির লোকজন। নুরের মা মানেজা বেওয়া বলছেন, “ভাবতেই পারিনি কাশ্মীরের ওরা এ ভাবে ছেলের পাশে দাঁড়াবে।” 

নুর তাঁর মাকে আশ্বস্ত করেছেন, “মা, জঙ্গি নয়, আসল কাশ্মীর ওই দোস্তরাই। ওরা মেহমানের কদর করে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ওদের এই ঋণ কখনও ভুলব না।’’

 

 


Find Out More:

Related Articles:

Unable to Load More