নির্বাচনী বন্ড নিয়ে লোকসভা অচল , বিলগ্নীকরণ ইস্যুতে অচল রাজ্যসভা ; ‘‘এটা বড়সড় দুর্নীতি। দেশকে লুট করা হচ্ছে। আমাদের বলতে দিন’’ : অধীর চৌধুরি

Akash Paramanik

আজ বৃহস্পতিবার আবারও সংসদ অচল হল । এদিন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও বিক্ষোভে সামিল হয় । লোকসভায় আজ বিক্ষোভে মূল কারণ ছিল নির্বাচনী বন্ড ইস্যু নিয়ে যে বিল লোকসভায় পেশ করা হয় তা নিয়ে চলে হইচই । দেখা যায় স্পীকার ও লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরি পরস্পরের মধ্যে বাগবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে ।
শেষে লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করেন কংগ্রেস সাংসদরা। অন্য দিকে কংগ্রেসের বিক্ষোভের জেরে দুপুর পর্যন্ত মুলতুবি থাকল রাজ্যসভা। কংগ্রেসের অভিযোগ, নির্বাচনী বন্ড এবং বেসরকারিকরণ— দুই ক্ষেত্রেই দুর্নীতিকে সরকারি সিলমোহর দেওয়া হচ্ছে।
২০১৭-১৮ সাধারণ বাজেটে নির্বাচনী বন্ডের ঘোষণা করেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার জন্য অর্থবিলের মাধ্যমে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আইনও সংশোধন করা হয়েছে। এই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া যায়। যে কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সরকারি ব্যাঙ্কগুলি থেকে এই বন্ড কিনে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে তা দিতে পারেন। কিন্তু গত সোমবারই একটি সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, এই বন্ড চালুতে আপত্তি জানিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার পরেই এ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় ফের বিতর্কের সূচনা করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি সত্ত্বেও নির্বাচনী বন্ড চালুতে কেন্দ্র সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। এটা আসলে দুর্নীতিকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার নামান্তর।’’ কিন্তু তাঁর বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের উল্লেখ করায় স্পিকার মণীশ তিওয়ারির মাইক্রোফোনের সংযোগ বন্ধ করে দেন এবং অন্য কোনও সাংসদকে বলার নির্দেশ দেন।এই সময়ই শুরু হয় স্পিকারের সঙ্গে কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরীর বাদানুবাদ। স্পিকার বলেন, ‘‘এটা ঠিক নয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় আলোচনা চলছে। ওয়েল থেকে স্পিকারের চেয়ারকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলবেন না। প্রত্যেক সাংসদের দায়িত্ব সংসদের নিয়মকানুন ও গরিমা বজায় রাখা।’’ অধীর চৌধুরীও পাল্টা বলেন, ‘‘এটা বড়সড় দুর্নীতি। দেশকে লুট করা হচ্ছে। আমাদের বলতে দিন।’’
স্পিকার এর পর বলেন, ‘‘আমি নতুন। আপনারা আমার চেয়ে অভিজ্ঞ। ওয়েলে নামবেন না।’’ জবাবে অধীর চৌধুরী বলেন, ‘‘আপনি নতুন নন। আপনি এই কক্ষের নেতা। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা মুলতুবি প্রস্তাব আনতে বাধ্য হচ্ছি, চেয়ারকে অসম্মান করার জন্য নয়। আমরা নোটিস দিয়েছি কারণ, এটা বিরাট দুর্নীতি। দেশকে লুট করা হচ্ছে।’’
তার মধ্যেই কংগ্রেস সাংসদদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী। তিনি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে স্বচ্ছ সরকার চলছে। সেখানে দুর্নীতির কোনও জায়গা নেই।’’ কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস প্রতিদিনই কোনও না কোনও ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব আনছে।’’ প্রায় পনের মিনিট এই হই হট্টগোল চলার পর সোনিয়ার নেতৃত্বে লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করে কংগ্রেস।
এ দিন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তির কথা উল্লেখ করে অন্য সব ইস্যুতে বিতর্ক স্থগিত রেখে গুরুত্ব সহকারে নির্বাচনী বন্ড ও বিলগ্নিকরণ নিয়ে রাজ্যসভায় আলোচনার প্রস্তাব দেয় কংগ্রেস। কিন্তু রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডু তা খারিজ করে বলেন, ‘‘নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করার মতো বিষয় এটা নয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তা ঠিক করার এক্তিয়ার চেয়ারপার্সনের।’’ এর পরেই বিরোধী সাংসদরা হই হট্টগোল জুড়ে দেন। ওয়েলে নেমে শুরু হয় বিক্ষোভ-স্লোগান। তার জেরে রাজ্যসভা দুপুর দুটো পর্যন্ত মুলতুবি করে দেন বেঙ্কাইয়া।

Find Out More:

Related Articles: