সিএএ তে স্থগিতাদেশ খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট

Biswas Riya

নয়া নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট কি বলে তা জানার জন্য এই শীতের সকালেও এমন ভিড় উপচে পড়েছিল যে প্রধান বিচারপতির এজলাসের দরজা পর্যন্ত বন্ধ করা যাচ্ছিল না। ‘‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন সকলের মনেরই একেবারে উপরে রয়েছে’’— বললেন প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে। কিন্তু তাতে স্থগিতাদেশ দিতে রাজি হলেন না।

সিএএ-র পাশাপাশি জাতীয় জনগণনা পঞ্জির (এনপিআর) কাজ বন্ধ রাখার দাবিও আজ মানেনি সুপ্রিম কোর্ট। একাধিক আইনজীবীর অভিযোগ ছিল, এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে, ধর্মের ভিত্তিতে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ বা ‘সন্দেহভাজন নাগরিক’-দের চিহ্নিত করার কাজ হবে। তাই এই প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হোক। কিন্তু প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ এই আবেদনে সাড়া দেয়নি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘আমি মনে করি না কোনও আইন অপরিবর্তনীয়। এই আর্জির শুনানির জন্যও দিনক্ষণ ঠিক করা দরকার।’’

 

প্রধান বিচারপতি অবশ্য আজ ইঙ্গিত দেন, শেষ পর্যন্ত সাংবিধানিক বেঞ্চেই সিএএ সংক্রান্ত মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে। এই সব মামলারই মূল প্রতিপাদ্য হল, সিএএ সংবিধানের বিরোধী। কারণ, এতে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রশ্নে ধর্মের ভিত্তিতে ভেদাভেদ করা হচ্ছে।

সিএএ-র পক্ষে-বিপক্ষে সুপ্রিম কোর্টে ১৪৪টি আবেদন জমা পড়েছে। কেন্দ্র সব আবেদনের জবাব দিয়ে উঠতে পারেনি। এ জন্য সুপ্রিম কোর্ট আজ কেন্দ্রকে চার সপ্তাহ সময় দিয়েছে। কেন্দ্রের আর্জি, আর কোনও মামলা যেন গৃহীত না হয়। কেন্দ্র জবাব দেওয়ার পরে, ফেব্রুয়ারির শেষে বা মার্চের গোড়ায় শুনানি শুরু হতে পারে। সাংবিধানিক বেঞ্চে মামলা পাঠানো, শুনানির দিনক্ষণ, অন্তর্বর্তী রায়ের বিষয়ে তখনই সিদ্ধান্ত হবে।

আইনজীবীরা আদালতে বলেন, এপ্রিল থেকে এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ শুরু হবে। সেই তথ্য ভবিষ্যতে দেশ জুড়ে এনআরসি-তে কাজে লাগানো হবে। পাকিস্তান-বাংলাদেশ-আফগানিস্তান থেকে আসা মানুষের মধ্যে মুসলিম ছাড়া বাকি ধর্মাবলম্বীদের সিএএ-র মাধ্যমে নাগরিকত্ব দিয়ে, এনপিআর, এনআরসি-র মাধ্যমে বেআইনি নাগরিক চিহ্নিত করা হবে।

আইনজীবী কে ভি বিশ্বনাথন বলেন, ‘‘সন্দেহভাজন নাগরিক তকমা দিতে প্রশাসনকে যথেচ্ছ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এক বার তা হয়ে গেলে, এই মানুষগুলিকে সুরাহা দেওয়ার আর কোনও পথ নেই। এর পরে ভোটার তালিকায় খেলা শুরু হবে। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সঙ্গে সংখ্যালঘুদের মধ্যেও এই উদ্বেগ ছড়িয়েছে।’’

আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি অভিযোগ করেন, উত্তরপ্রদেশ সরকার দু’সপ্তাহ আগেই বহু মানুষকে সন্দেহভাজন নাগরিক বলে চিহ্নিত করে ফেলেছে। সিএএ-তে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। আইনজীবী কপিল সিব্বল আর্জি জানান, অন্তত দু’সপ্তাহের জন্য সিএএ এবং এনপিআরের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া হোক। কিন্তু কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, সিএএ-র উপরে স্থগিতাদেশ ও তার প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেওয়া আদতে একই।

আইনজীবী শ্যাম দিভান পাল্টা বলেন, সিএএ-তে নাগরিকত্বের শংসাপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অন্তত স্থগিতাদেশ দেওয়া উচিত। কারণ, এক বার নাগরিকত্ব দেওয়ার পরে, সুপ্রিম কোর্ট সিএএ-কে খারিজ করে দিলেও সেই নাগরিকত্ব খারিজ হবে না। কিন্তু বেণুগোপাল বলেন, আইনে নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের ব্যবস্থাও আছে।

 

 

 

Find Out More:

Related Articles: