আবার লাল কার্ড দেখলেন ইগর স্টিমাক

A G Bengali
যত কান্ড বেঙ্গালুরুতে। আশি মিনিট পর্যন্ত যা খেলা চলছিল তাতে ভারতের জয় শুধু ছিল সময়ের অপেক্ষা। প্রথমার্দ্ধের সংযুক্ত সময়ের দু মিনিটে সুনীল ছেত্রীর গোলে এগিয়ে ছিল ভারত। কিন্তু একাশি মিনিট থেকেই শুরু হল গণ্ডগোল। একাশি মিনিটে লাল কার্ড দেখলেন ভারতের কোচ ইগর স্টিমাক। নব্বই মিনিটে লাল কার্ড দেখলেন ভারতের পরিবর্ত ফরোয়ার্ড রহিম আলি। আর তার দু মিনিট পরে বিপক্ষের সেন্টার ক্লিয়ার করতে গিয়ে আনোয়ার আলির হেড গোলে ঢুকে গেল। সব মিলিয়ে জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে এলেন সুনীল ছেত্রীর সতীর্থরা। ফলে সাফ কাপের গ্রুপ লিগের শেষে এ গ্রুপ থেকে কুয়েত হয়ে গেল চ্যাম্পিয়ন, ভারত রানার্স। তাই আগামি পয়লা জুলাই সেমিফাইনালে ভারতকে খেলতে হবে সম্ভবত লেবাননের সঙ্গে। কারণ গ্রুপ বি-তে লেবাননই এক নম্বর হওয়ার অপেক্ষায়। কদিন আগে আন্তঃ মহাদেশীয় কাপের ফাইনালে ভারত হারিয়েছে লেবাননকে। তাই ভারতের ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
তবে সেই ম্যাচেও ভারত তাদের ডাগ আউটে পাবে না কোচ ইগর স্টিমাককে। ক্রোয়েশিয়ার হয়ে ১৯৯৮ সালের বিশ্ব কাপে চতুর্থ হয়েছিলেন স্টিমাক। ২০১৯ থেকে তিনি ভারতীয় ফুটবল দলের দায়িত্বে। তাঁর আমলে দেশের মাটিতে ভারত কোনও ম্যাচ হারেনি। এমনিতে ঠান্ডা মাথার মানুষ স্টিমাক আবারও লাল কার্ড দেখলেন। পাকিস্তান ম্যাচের পর আবার মঙ্গলবার। ৬৩ মিনিটে তাঁকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়। মহেশ সিং আর কুয়েতের আল কুয়ালফের মধ্যে মারামারি চলার সময় মাঠে ঢুকে পড়েন স্টিমাক। রেফারি তাঁকে হলুদ কার্ড দেখান। এর পর একাশি মিনিটের মাথায় তিনি রেফারির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মাঠে ঢুকে পড়েন। রেফারি এগিয়ে এসে তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে বের করে দেন মাঠ থেকে। মাথা নীচু করে স্টিমাক চলে যান ড্রেসিং রুমে। সেখানে বসেই জানতে পারেন ৯০ মিনিটে রহিম আলি লাল কার্ড দেখেছেন। আসলে সাহাল আব্দুল সামাদকে বিশ্রিভাবে ফাউল করেন আল কুয়ালফ। সামাদকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেই ছুটে গিয়ে মারেন কুয়ালফকে। পাল্টা মারেন কুয়েতী ফুটবলারটিও। রেফারি দু জনকেই লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। এর দু মিনিট পরেই গোল খেয়ে যায় ভারত। আলব্লৌশির সেন্টার হেড করে ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের গোলে ঢুকিয়ে দেন আনোয়ার আলি। সারা ম্যাচ ভাল খেলেও অনিচ্ছাকৃত ভুলের খেসারত দিতে হল আনোয়ারকে। সঙ্গে ভারতকেও।
যার জন্য টানা আটটি ম্যাচ গোল না খেয়ে জেতার পর নয় নম্বর ম্যাচে ভারত গোলও খেল এবং জিততেও পারল না। সব মিলিয়ে র‍্যাংকিংয়ে কুয়েতের চেয়ে অনেক এগিয়ে থেকেও ভারত ম্যাচ জিততে পারল না। অথচ তারা কিন্তু জেতার মতোই খেলল। ভারতের কোচ ভাবছিলেন সুনীল ছেত্রীকে বিশ্রাম দেবেন। ভাগ্যিস দেননি। সুনীল শুধু গোলই করলেন না, তিনি যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, ভারত গোল খায়নি। তবে বিরতির ঠিক আগে গোল খেলেও কুয়েত কিন্তু সারাক্ষণ গোল করার চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু ভারতের গোলকিপার অমরিন্দর সিং দুরন্ত খেলে নিজেদের গোলে বল ঢুকতে দেননি। একবার নয়, অন্তত চারবার তিনি নিশ্চিত গোল বাঁচিয়েছেন। দুর্দান্ত খেলেছেন সন্দেশ ঝিঙ্গনও। আসলে ভারতের মাঝ মাঠের দুই ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার অনিরুদ্ধ থাপা এবং জিকসন সিং তাদের ডিফেন্সিভ ফুটবল খেলার দায়িত্ব ছেড়ে অ্যাটাকিং ফুটবলের দিকে ঝুঁকে পড়েন বেশি। কুয়েত এই সুযোগটা নিয়ে সারাক্ষণ আক্রমণের চেষ্টা করে গেছে। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হল ৯২ মিনিটে।
ভারতের গোলটা অবশ্য সুনীলের অনবদ্য চেষ্টার ফসল। অনিরুদ্ধ থাপার কর্নার বক্সের মধ্যে পড়তেই ডান পায়ের সাইড ভলিতে গোল করলেন সুনীল। ৯২টি গোল হয়ে গেল তাঁর। এবারের সাফ কাপে পাঁচটি গোল হয়ে গেল। টপ স্কোরারের পুরস্কারটা তাঁর ভাগ্যেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু ট্রফিটা ? ভারত যদি সেমিফাইনালে লেবাননকে হারায় তাহলে ফাইনালে কুয়েতের সামনেই হয়তো পড়বে। সেদিন কিন্তু ম্যাচ জেতা খুব সহজে হবে না। কুয়েত একবার রক্তের সাধ পেয়ে গেছে। সেখান থেকে তাদের আটকানোর কাজটা খুব কঠিন। তবে অবশ্যই অসম্ভব নয়।    

Find Out More:

Related Articles: