চরম উত্তেজনা ঘুম কেড়েছে কন্ট্রোল রুমের সদ্যসদ্যের
২০ শে অগাস্ট পর্যন্ত এখন কি হয় কি হয় অবস্থা। একটু এ দিক ও দিক হয়ে গেলেই জলে যাবে ১ হাজার কোটি টাকা।তাই ইসরোর চন্দ্রজান ২ এর মিশন কন্ট্রোল রুমে এখন রীতিমতো দাঁতে দাঁত চেপে উৎকণ্ঠায় দিন-রাতের ২৪ ঘণ্টার প্রত্যেকটি সেকেন্ড কাটাচ্ছেন প্রযুক্তিবিদ ও বিজ্ঞানীরা। বলা ভাল, উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছেন মিশন কন্ট্রোল রুমের সদস্যরা।
‘‘এক শিফ্ট থেকে অন্য শিফ্ট বা তার পরের শিফ্ট বা তার পরের...। দায়িত্ব বদলে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কাজ সেরে গভীর রাতে বাড়ি ফিরেও তীব্র উৎকণ্ঠায় আর চোখের পাতাদু’টো এক হচ্ছে না’’, টেলিফোনে বললেন ইসরোর মিশন কন্ট্রোল রুমের এক বিশিষ্ট প্রযুক্তিবিদ। তাঁর কথায়, ‘‘বলতে পারেন, সামনের ২৪/২৫ দিন আমাদের নাওয়া-খাওয়া এক রকম বন্ধই! অগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত। তার পর চাঁদের কক্ষপথে চন্দ্রযান-২ ঢুকে পড়লে একটুনিশ্চিন্ত হতে পারব। তার পর আবার শুরু হবে টেনশন। সেপ্টেম্বরের ৩/৪ তারিখ থেকে। ৬ সেপ্টেম্বরই যে চাঁদে আলতো ভাবে পা ছোঁয়ানোর (সফ্ট ল্যান্ডিং) কথা ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর।
বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের মতে এই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ইসরো কমাতে পারত যদি ক্ষমতা আরও বাড়াতে পারত ‘জিএসএলভি-মার্ক-৩’ রকেটের। নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির এক বিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘আমরা ১৯৬৯ সালেই যে ‘স্যাটার্ন-ফাইভ’ রকেটে চাপিয়ে পাঠিয়েছিলাম অ্যাপোলো-১১ মিশন, তা উৎক্ষেপণের পর চাঁদের বুকে নামতে সময় নিয়েছিল মাত্র চার দিন বা তার সামান্য বেশি। চিনও গত বছর চাঁদের না-দেখা পিঠে ল্যান্ডার ও রোভার পাঠিয়েছে উৎক্ষেপণের পর মাত্র পাঁচ দিনে। ইসরোর লাগছে ৪২ দিন। ইসরোর ল্যান্ডারের চাঁদে নামার কথা আগামী ৬ অক্টোবর।
হিসাব অনুযায়ী সব কিছু ঠিক থাকলে চন্দ্রযান-২ তা হলে সোজা চাঁদে যাওয়ার রাস্তায় (লুনার ট্রান্সফার অরবিট) ঢুকবে আগামী ১৪ অগস্ট। মানে, আজ থেকে ১৯ দিনের মাথায়। সেটা চাঁদের বৃত্তাকার কক্ষপথ। কিন্তু সেই কক্ষপথের ব্যাসার্ধটা অনেক বড়। যার অর্থ, চাঁদ থেকে তখন অনেকটাই দূরে থাকবে চন্দ্রযান-২। তার পর ২০ অগস্ট, ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযান ঢুকে পড়বে চাঁদের কাছের কক্ষপথে। পড়ে যাবে পুরোপুরি চাঁদের অভিকর্ষ বলের খপ্পরে। যখন চাঁদকে এড়িয়ে সৌরমণ্ডলের আর কোথাও যাওয়া সম্ভব নয় চন্দ্রযান-২-এর। সেইখানেই বিগড়ে বা পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে চাঁদের কক্ষপথেই অনন্ত কাল ধরে ঘুরতে হবে ভারতের দ্বিতীয় চন্দ্রযানকে।
কাজেই পুরোটাই এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।